ইসলামের আলোকে মহাবিশ্বতত্ত্ব
ইসলামের আলোকে মহাবিশ্বতত্ত্ব
ইসলামী সৃষ্টি তত্ত্ব বনাম আধুনিক বৈজ্ঞানিক সৃষ্টিতত্ত্ব
দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান জীব ও জড় নির্বিশেষে সকল সৃষ্টিজগতের সৃষ্টিকর্তা প্রকৃত অর্থে কে? এবং এটি কখন, কিভাবে এবং কি দিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল?-এ সম্পর্কিত বিস্তারিত তাত্ত্বিক ইতিহাস-কে সৃষ্টিতত্ত্ব (Creationism) বলা হয়। এ বিষয়ে রয়েছে একাধিক তত্ত্ব যথাঃ (ক) আস্তিক্যবাদী আধ্যাত্মিক সৃষ্টিতত্ত্ব এবং (খ) আধুনিক বৈজ্ঞানিক সৃষ্টিতত্ত্ব ।
আধ্যাত্মিক বা আস্তিক্যবাদী সৃষ্টিতত্ত্ব মতেঃ Nothing থেকে Everything সৃষ্টি হয়নি বরং অত্যন্ত সূক্ষ্ণদর্শী এবং মহা প্রবল প্রতাপশালী মহাজ্ঞানী একক সৃষ্টিকর্তা-ই সুপরিকল্পিত ও সুশৃঙ্খলিত এবং কঠোর নিয়মানুবর্তিতার মধ্য দিয়ে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন (সুবহা-নাল্লাহি ওয়াবিহামদিহী, সুবহা-নাল্লাহিল আজীম)।
আস্তিক্যবাদী সৃষ্টি তত্ত্বের অপর নাম “ইসলামী সৃষ্টিতত্ত্ব”। ইসলামী সৃষ্টিতত্ত্বে মহাবিশ্বের মহান সৃষ্টিকর্তা, সৃষ্টির পূর্ব অবস্থা এবং পরের অবস্থা, পরিবর্তন এবং মহা ধ্বংসতত্ত্ব (কেয়ামত) ইত্যাদি সম্পর্কিত পবিত্র কুরআন ও সহীহ্ সুন্নাহ ভিত্তিক বিশদ বিবরণ রয়েছে।
পক্ষান্তরে বস্তুবাদী সৃষ্টিতত্ত্বে কেবল মহাবিশ্বের কিভাবে উৎপত্তি ঘটেছে সে সম্পর্কে ধারণামূলক বিশ্ব সৃষ্টিতত্ত্ব রয়েছে। বস্তুবাদী সৃষ্টিতত্ত্বের অপর নাম “যান্ত্রিক বস্তুবাদ”। এ তত্ত্ব মতে, বস্তুর যান্ত্রিক ধারায় সৃষ্টির অস্তিত্ব লাভ, পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনা ঘটছে। অর্থাৎ যা ঘটেছে, ঘটছে এবং ঘটবে-সবই বস্তুর যান্ত্রিক ধারার অনিবার্য ফসল (নাউযুবিল্লাহি মিন জালিক)। এ ধরণের ধারণা-বিশ্বাস এক ধরণের নিশ্চয়তাবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত। এতে যা ঘটবে তা ঘটবেই এবং যা ঘটবে না, তা কখনই ঘটবে না। এ ধরণের বিশ্বাস ইসলামীমতের “অপরিবর্তনশীল তকদির” এর সাথে প্রায় সাদৃশ্যপূর্ণ।
তবে, ইসলামী মতে এর অনুঘটক যন্ত্র নয়; সর্বশক্তিমান আল্লাহ। তাছাড়া এমন কিছু ঘটনা/বিষয় রয়েছে যা পরর্বিতনশীল এবং আল্লাহপাকের কুদরতি ইচ্ছায় এর পরিবর্তন সাধন হয়ে থাকে অথবা এমন দোয়া-মুনাজাত রয়েছে তা পরর্বিতনশীল তাকদীরের পরিবর্তন ঘটায়। যেমনঃ “বিসমিল্লাহিল্লাজি লা-ইয়াদিররু মাআশফি শাইয়্যুন ফিল আরদ্বি ওয়ালা-- ফিস্ সামা-য়ে ওয়াহুয়াস সামিউল আ’লিম” (সকাল-বিকাল তিন বার করে পাঠ্য)-এই দোয়ার বরকতে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন পরিবেশ-প্রতিবেশ বা অবস্থার পরিবর্তন ঘটায়- যার (ঘটনা-দূর্ঘটনা) সংঘটন ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র।
আধুনিক বৈজ্ঞানিক সৃষ্টিতত্ত্ব
আধুনিক সৃষ্টিতত্ত্বমতে, স্থান ও সময় এবং এদের অন্তর্ভুক্ত সকল বিষয় নিয়েই মহাবিশ্ব অর্থাৎ পৃথিবী এবং অন্যান্য সমস্ত গ্রহ, সূর্য ও অন্যান্য তারা ও নক্ষত্র, জ্যোতির্বলয়স স্থান ও এদের অন্তর্বর্তীস্থ গুপ্ত পদার্থ , ল্যামডা-সিডিএম নকশা ও শূণ্যস্থান (মহাকাশ) -তাছাড়া যেগুলো এখনও তাত্ত্বিকভাবে অভিজ্ঞাত কিন্তু সরাসরি পর্যবেক্ষিত নয় - এমন সবপদার্থ ও শক্তি মিলে যে জগৎ তাকেই বলা হচ্ছে মহাবিশ্ব (Universe)।
সৃষ্টিতত্ত্ব বিষয়ক আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক মতামত
১) আধ্যাত্মিক বা আস্তিক্যবাদী ২) বস্ত্তবাদ বা যান্ত্রিক বাদী
মহাবিস্ফোরণ (Big Bang) ঘটার মহাবিশ্বেরর পূর্বেকার অবস্থাঃ
১৯৬৫ সালে পশ্চাৎপদ বিকিরণ (Back Ground Radiation) আবিস্কারের পর সেই রেডিয়েশনের Computer simulation এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, সম্পূর্ণ নাই/শুন্য/নিল (Nil)/জিরো(Zero) থেকে মহাবিশ্বের মহাসৃষ্টির সূচনার অর্থাৎ মহাবিস্ফোরণ (Big Bang) ঘটার পূর্বে মহাশক্তিশালী এক প্রকার আলোক শক্তিই বিদ্যমান ছিল-যার বৈজ্ঞানিক নামঃ “মহাসূক্ষ্ণ আলোক বিন্দু” (Highest Energetic Radiation) । এতে সম্মিলিতভাবে(Combined) নিহিত ছিল ৪ মহাবল, ডার্ক ম্যাটার, ডার্ক এনার্জিসহ আজকের সূর্যসহ অগরিত নক্ষত্র, মিল্কিওয়েসহ বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সি সমৃদ্ধ আসমান এবং পৃথিবীসহ যমিন।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, আজ থেকে প্রায় ১৫০০ কোটি থেকে ২০০০ কোটি বৎসর পূর্বে উক্ত ““মহাসূক্ষ্ণ” বিন্দুটি 10º³ e.s.a পর্যায়ে স্থিতি লাভ করেছিল। ফলে বিজ্ঞান এ সত্য মানব জাতিকে অবগত করাতে সক্ষম হয় যে, শুণ্য থেকে সৃষ্ট উক্ত Highest Energetic Radiation নামক মহাআলোক গোলকটি মহাবিস্ফোরণ (Big Bang) এর পূর্বে (১) আলো (২) শক্তি ও (৩) তাপ-এই ত্রিমাত্রিক অবস্থায় বিরাজমান ছিল । এই সময় তাপমাত্রার পরিমাণ ছিল 10³² ডিগ্রি কেলভিন অর্থাৎ ১০,০০০ কোটি, কোটি, কোটি, কোটি ডিগ্রি কেলভিন।
মহাবিস্ফোরণ (big bang) ঘটার পরবর্তী মুহুর্তে মহাবিশ্বের অবস্থা
বৈজ্ঞানিক ভাষ্যমতে, Highest Energetic Radiation-এ মহাবিস্ফোরণ (big bang) ঘটার পর মুহুর্তে তাপমাত্রা 10³ºk থেকে দ্রুত 10²8-এ নেমে আসে।
অতঃপর সৃষ্টি হয় প্রথমবারের মতো highest energetic photon নামক এক প্রকার ভরশুন্য কণিকা। কণিকারা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটিয়ে পদার্থ কণিকা হিসেবে প্রথম বারের মত ‘কোয়ার্ক’ এবং এন্টি কোয়ার্ক এর জন্ম দেয়। অতঃপর তাপমাত্রা যখন আরো নিচে নেমে 10¹³k কেলভিনে দাঁড়ায় তখন কোয়ার্ক এবং এন্টি কোয়ার্কের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এতে উভয় এর ব্যাপক ধ্বংস সাধন ঘটে এবং অবশিষ্ট থেকে যায় কিছু কোয়ার্ক।
এরপর যখন তাপমাত্রা আরো কমে গিয়ে 10¹ºk কেলভিন-এ দাঁড়ায় তখন ৩টি কোয়ার্ক (১টি আপ কোয়ার্ক এবং ২টি ডাউন কোয়ার্ক মিলিত হয়ে প্রোটন কণিকা (Proton Particle) এবং ৩টি কোয়ার্ক (২টি আপ কোয়ার্ক এবং ১টি ডাউন কোয়ার্ক) মিলিত হয়ে নিউট্রন কণিকা (Neutron Particle) সৃষ্টি হতে থাকে।
তারপর তাপমাত্রা যখন 10000000000 কেলভিন-এ নেমে আসে তখন পরিবেশ আরো অনুকুলে আসায় সৃষ্ট প্রোটন কণিকা ও নিউট্রন কণিকা পরষ্পর মিলিত হয়ে প্রথমবারের মত মহাবিশ্বে এটমিক নিউক্লি গঠিত হতে থাকে।
এরপর তাপমাত্রা আরও কমে গিয়ে 1000000000 কেলভিন তখন এটমিক নিউক্লি মহাবিশ্বে বিক্ষিপ্ত ভাবে ছুটে চলা ইলেকট্রনিক কণিকাকে (Electronic Particle) চর্তুদিকের কক্ষপথে ধারণ করে। ফলে প্রথমবারের মত অণু'র (atoms) সৃষ্টি হয়।
আরও পরে যখন তাপমাত্রা ৩,০০০ কেলভিনে উপনীত হয় তখন মহাবিশ্বের মূল সংগঠন গ্যালাক্সি (Galaxy) সৃষ্টি হতে থাকে। পরবর্তীতে এর ভেতর নক্ষত্র, গ্রহ, উপগ্রহ ইত্যাদি সৃষ্টি হতে থাকে। অতঃপর তাপমাত্রা যখন আরো নিম্নগামী হয়ে মাত্র ৩ কেলভিনে নেমে আসে তখন সার্বিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় পৃথিবীতে গাছ-পালা, জীব-জন্তু ও প্রাণের ব্যাপক সমাবেশ সমাগম ঘটতে থাকে।
আইনস্টাইনের তত্ত্বমতে, পদার্থ যেমন চুপসে যেতে যেতে এক পর্যায়ে পরমবিন্দুতে (সিঙ্গুলারিটিতে) পৌঁছে থেমে যায়, সম্পূর্ণ নিঃশেষ হয়ে যায় না তেমনি মহাবিশ্বের তাপমাত্রা 10³ºk থেকে দ্রুত যথাক্রমে 10²8,10¹³k কেলভিন,10¹ºk কেলভিন,1000000000 কেলভিন,আরও পরে যখন তাপমাত্রা ৩,০০০ কেলভিন এবং সর্বশেষে -মাত্র ৩ কেলভিনে নেমে আসে।
Comments
Post a Comment