ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি (Unified Field Theory) বা সমন্বিত ক্ষেত্র

 আইনস্টাইনের  ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি (Unified Field Theory) বা সমন্বিত ক্ষেত্র

স্ট্রিং থিওরিঃ আইনস্টাইনের ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরির (সমন্বিত ক্ষেত্র তত্ত্বের) বীজ!

জার্মান পদার্থ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের জগদ্বিখ্যাত গবেষণাধর্মী বিষয়টি ছিলঃ ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি (Unified Field Theory) বা “সমন্বিত ক্ষেত্র তত্ত্ব” । তিনি এমন একটি তত্ত্ব গঠন করতে চেয়েছিলেন, যা একই সঙ্গে প্রকৃতির জানা সকল বল ও ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে পারে; অর্থাৎ এমন একটি সমীকরণ, যা দিয়ে প্রকৃতির সবকিছু বর্ণনা করা যায়।

আইনস্টাইনের বিশ্বাস ছিল, এমন একটি তত্ত্ব অবশ্যই আছে, যা দিয়েই প্রকৃতির সবকিছু বর্ণনা করা যাবে। এই তত্ত্বটি এতই জনপ্রিয় ছিল যে, আইনস্টাইনের মৃত্যুর পর, বিশ্বের সব পত্রিকায়ই একটি অগোছালো ডেস্কের ছবি ছাপা হয়। ডেস্কটি স্বয়ং আলবার্ট আইনস্টাইনের। ডেস্কের ছবির সাথে পত্রিকার শিরোনাম করা হয়, “The unfinished manuscript of the greatest work, of the greatest scientist of our time”বিজ্ঞানীরা মনে করেন ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি (Unified Field Theory) বা সমন্বিত ক্ষেত্র তত্ত্বে লুকিয়ে আছে স্ট্রি থিওরির বীজ।

বিজ্ঞান যে প্রক্রিয়ায় ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরির (Unified Field Theory) দিকে অগ্রসর হচ্ছে

আইনস্টাইন মারা যাবার দশক দুয়েক পরেই পদার্থ বিজ্ঞানে বেশ কিছু বড়সড় পরিবর্তন আসে। ষাটের দশকের শেষের দিকে বিজ্ঞানীরা এমন একটি তত্ত্বের প্রয়োজন অনুভব করেন যাতে লুকিয়ে আছে ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি (Unified Field Theory) বা সমন্বিত ক্ষেত্রের বীজ। এ কারণে বিজ্ঞানীরা প্রথমতঃ তাগিদ অনুভব করেন মহাবিশ্বের ৪ বলের একীভূতকরণ । দ্বিতীয়তঃ স্ট্রিং থিওরির যাতে থাকবে ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি (Unified Field Theory) বা সমন্বিত ক্ষেত্র তত্ত্বের বীজ।

 এরি পরিপ্রেক্ষিতে নতুন নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে পরমাণুর জগত ও মহাকাশের অজানা রহস্য উন্মোচনের জোর প্রচেষ্টা। এ প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে বিজ্ঞানীরা অতিপারমাণবিক জগতের রহস্য উদঘাটনে সাইক্লোটন যন্ত্রের সাহায্যে কণা চূর্ণবিচূর্ণ করে নতুন নতুন কণার উদ্ভব ঘটায়। মডার্ণ কসমোলজিক্যাল স্ট্যান্ডার্ড মডেলে হিগস বোসন নামের এমন এক কণার সন্ধান লাভ জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছিল যা ফোটন জাতীয় ভরশুন্য কণায় ভরত্ব প্রদান করে থাকে।

মূলধারার গবেষকরা বুঝতে পারেন, প্রকৃতিতে যে চারটি মৌলিক বল আছে তাদের একীভূত না করতে পারলে নতুন নতুন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না। আর প্রকৃতিকেও বোঝা সম্ভব না। আইনস্টাইনের স্বপ্নের “ ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি ” তখন বিজ্ঞানীদের বাস্তব প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায়

রহস্যময় গুপ্ত পদার্থ ও রহস্যময় শক্তি

যদি প্রশ্ন করা হয়, আমাদের মহাবিশ্বের সবকিছু কি দিয়ে গঠিত? তাহলে অনেকে হয়ত বলবে, কোয়ার্ক, ইলেকট্রন , প্রোটন আর নিউট্রন,হাইড্রোজেন, হিলিয়াম ইত্যাদি অণু-পরমাণু দিয়ে গঠিত

প্রাচীন কালের ডেমোক্রিটাস নামে এক গ্রিক বিজ্ঞানী মনে করতেন যে, কোন পদার্থকে ভাঙ্গলে দেখা যাবে এরা খুব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দিয়ে গঠিত যার না দিলেন গ্রীক ভাষায় অ্যাটম যার বাংলা অর্থঃ আর ভাঙ্গা যাবে না । ভিন্নমত পোষণ করে অআরেক গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল(৩৮৪-৩২২ খ্রিঃপূঃ) মনে করতেন, আমাদের মহাবিশ্বে যা কিছু আছে তা সবই “মাটি”, “পানি”, “আগুন” আর “বাতাস” এই চারটি মৌলিক জিনিস দিয়ে গঠিত। কিন্ত্ত মধ্যযুগে অ্যারিস্টটলের এ ধারণায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে জাবের ইবনে হায়ান অআল অআরাবী বলেনঃ মহাবিশ্ব ৪ মাত্রিক নয়, দ্বি মাত্রিক। এই দ্বিমাত্রিকতার উপর ভিত্তি করে আধুনিক বিজ্ঞানের দ্বার উন্মোচন করেন দিমিত্রি মারে গেলমান পর্যায় সারণী নাম দিয়ে। এতে সংস্কার আসে রমন তত্ত্বের মাধ্যমে। অতঃপর ১৯১১ সালে আর্নেস্ট রাদারফোর্ড নামে একজন পদার্থবিজ্ঞানী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একটি পরমাণু মডেল প্রস্তাব করেন । পরবর্তীতে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেই মডেলের উন্নতি করা হয়। আর একথাও প্রতিষ্ঠিত হয় যে, সকল পদার্থই পরমাণু দিয়ে গঠিত; তবে এসব পরমাণুও অবিভাজ্য নয়। পরমাণুগুলো ইলেকট্রন, প্রোটন আর নিউট্রন নামে মৌলিক কণিকা দিয়ে গঠিত। অতিপারমাণবিকতার গভীর থেকে গভীরে প্রবেশ করে বিজ্ঞানীরা বর্তমানে যাত্রা বিরতি করছেন কোয়ার্ক এবং ইলেক্ট্রন পর্যন্ত জ্ঞানসীমা পৌঁছা পর্যন্ত। তবে এই সীমা বর্তমানে সম্প্রসারিত হচ্ছে স্ট্রিং থিওরির মধ্য দিয়ে।

যে জটিলতায় বিজ্ঞানীরা এখন বিপাকে

প্রকৃতিকে প্রথমে যতটা সহজ সরল বলে ভাবা হয়েছিল, দেখা গেল ব্যাপারটা মোটেই সেরকম না। বিজ্ঞানীরা দেখতে পেলেন, কোন সহজ উপায়েই পরমাণুর ভেতরে থাকা অতি-পারমানবিক কণাদের আচরণ ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। গবেষণা চলতেই থাকল। পরবর্তী গবেষণায় বেরিয়ে এলো আরও আশ্চর্য তথ্য। প্রোটন, নিউট্রনকে আমরা যেমন অবিভাজ্য ও মৌলিক কণা বলে ভেবে এসেছি, সেগুলো আসলে অবিভাজ্য না। প্রোটন ও নিউট্রনগুলো “কোয়ার্ক” নামে এক ধরনের কণা দিয়ে গঠিত। তিনটি কোয়ার্ক মিলে তৈরি হয় একটি প্রোটন বা নিউট্রন। পার্টিক্যাল এক্সিলারেটরের ভিতর পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে ভেঙ্গে আরও অনেক অস্থায়ী অতি-পারমানবিক কণিকার অস্তিত্ব পাওয়া গেল। তবে এরা সবাই কিন্তু পদার্থের কণিকা। এটুকু আমরা জানতে পারলাম, সকল প্রকার পদার্থ পরমাণু দিয়েই গঠিত আর এসব পরমাণু বিভিন্ন অতি-পারমানবিক কণা দিয়ে দিয়ে তৈরি। কিন্ত্ত বিজ্ঞানীদের বর্তমান পর্যবেক্ষণ ও গণনা অনুযায়ী মহাবিশ্বের মোট পদার্থ ও শক্তির ৭৩% ই হল “ডার্ক এনার্জি”, ২৩% “ডার্ক ম্যাটার”, ৩.৬% মুক্ত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম(মহাজাগতিক ধূলিকণা) ও ০.৪% পদার্থ(যা দিয়ে উপগ্রহ,গ্রহ, নক্ষত্র,ধূমকেতু ইত্যাদি গঠিত )। অর্থাৎ জানা পদার্থের পরিমাণ মাত্র ৪ শতাংশ? এই ডিজিটাল যুগে? তাহলে কী নিউটনের কথা সত্য? জীবন সায়াহ্নে তিনি  বলেছিলেনঃ ......অআইনস্টাইন সাধারণ অআপেক্ষিকতা তত্ত্ব অআবিস্কারের পর বৈজ্ঞানিক জীবনের উপসংহার টেনে বলেছিলেনঃ এই যদি হয় গবেষণার অর্থ  তাহলে গবেষক না হয়ে বেয়ারা হওয়াই ভালো ছিল। সাগরদের অআবদার রক্ষা করতে গিয়ে তিনি তাঁর পরম সাধের ইনভেরিয়েন্ট থিওরি-কে জেনারেল রিলিটিভিটি থিওরি নামকরণ করে পুরো জীবন-জগৎকে আপেক্ষিকতায় রূপ দিয়েছেন।  এমনকি নিউটনীয় ক্ল্যাসিক্যাল বল বিজ্ঞানের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এ তত্ত্বে প্রমাণ করেন আলোর বাঁকও আপেক্ষিক। সরল পথে গমণকারী অআলো মহাকাশে মহাকর্ষের প্রভাবে বেঁকে চলে! অথচ বিশেষ অআপেক্ষিকতার মূল কথাটি ছিল ইনভেরিয়েন্ট অর্থাৎ অপরিবর্তনশীল যেমন অআলোর গতি নির্দিষ্ট, অপরিবর্তনশীল-এই মিথ বা বদ্ধমূল ধারণাকে আরও সংহত-মজবুত করতে দীর্ঘ ১০ বছরের সাধনার ফসল জেনারেল রিলিটিভিটি থিওরি।

আইনস্টাইন তার আপেক্ষিক তত্ত্বের সফলতা নিয়ে খুশি ছিলেন না। তার ইচ্ছা ছিল প্রকৃতিকে আরও গভীর ভাবে বুঝতে পারা। প্রায় সময়ই বলতেন, তিনি ঈশ্বরের মন বুঝতে চান। তার সময়ে জানা দুটি মৌলিক বলকে ব্যাখ্যা করার জন্য দুটি তত্ত্ব ছিল। ১) তড়িৎ-চুম্বক বলকে ব্যাখ্যা করার জন্য ছিল ম্যাক্সওয়েল তড়িৎ-চুম্বক তত্ত্বের সমীকরণ। এই সমীকরণগুলো স্থানের যেকোনো বিন্দুতে এই বলের প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করতে পারত। আর ২) মহাকর্ষ বল ও স্থান-কালের প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করার জন্য ছিল আইনস্টাইনের নিজের “আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব”। কিন্তু এই দুটি তত্ত্বকে কোনভাবেই একটির সাথে অন্যটিকে সমন্বিত করা যাচ্ছিল না। দুটি তত্ত্বই পৃথকভাবে খুবই সফল, কিন্তু দুটিকে এক করার কোন উপায় তিনি খুঁজে পাচ্ছিলেন না। আইনস্টাইনের বিশ্বাস ছিল এই দুটি তত্ত্বকে এক করতে পারলে আমরা আরও মৌলিক কোন তত্ত্ব পাব।যার সাহায্যে প্রকৃতির আরও গভীরের প্রবেশ করা যাবে। তিনি নিশ্চিত ছিলেন, সেই কথিত “ইউনিফাইড ফিল্ড থিওরি” গঠন করা সম্ভব হলে তিনি ঈশ্বরের মন বুঝতে পারবেন। এখন প্রশ্ন হল, আমাদের হাতে কি এমন কোন একক তত্ত্ব নেই যা ডার্ক ম্যাটারের মত অজানা বস্তু সহ সকল প্রকার পদার্থ ও শক্তির ব্যাখ্যা দিতে পারে? উত্তর হল হ্যাঁ। আমাদের কাছে এমন একটি তত্ত্ব আছে; আর সেটিই হল- স্ট্রিং থিওরি(String Theory) বা তার তত্ত্ব। স্ট্রিং থিওরিই একমাত্র তত্ত্ব যা প্রকৃতির সকল বস্তুকণার আচরণ ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি প্রকৃতিতে বিদ্যমান চারটি মৌলিক বলকেও একীভূত করতে পারে।

এই তত্ত্ব শুধু সকল প্রকার পদার্থ ও শক্তিকে বর্ণনাই করে না, পাশাপাশি এই মহাবিশ্ব কেন আছে তারও উত্তর দেয়। আরেকভাবে বললে বলা যায়, স্ট্রিং থিওরি আমাদের “বিগ ব্যাঙ” বা মহাবিশ্ব সৃষ্টিরও আগে নিয়ে যায়। এই তত্ত্ব সেইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে চায়, হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ যার খোজ করে যাচ্ছে। কেন এই মহাবিশ্ব ?

 বিজ্ঞানীরা মনে  করেন, স্ট্রিং থিওরির এমন সব বৈশিষ্ট্য আছে যাতে এটি নিজেকে সবকিছুর তত্ত্ব বা “Theory of Everything” বলে দাবি করতে পারে। আর এটিও বলতে পারে কেন এই মহাবিশ্ব ?



স্ট্রি থিওরির সম্ভাবনা ও তার সীমাবদ্ধতার স্বরূপঃ

আমাদের পৃথিবী বা অন্য গ্রহগুলো ইলেকট্রন, কোয়ার্ক, হিগসবোসনসহ ১৬ প্রকারের মৌলিক কণিকা দিয়ে গঠিত তা নয়; বরং বিজ্ঞানীরা দেখলেন যে, আমাদের সৌরজগৎ, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি এমনকি মহাবিশ্বে যত নীহারিকা,ধূমকেতু বা মহাজাগতিক ধূলিকণা যা কিছু আছে তার সবটাই যেন আমাদের চির চেনা-জানা বস্ত্ত-পদার্থ দিয়েই গঠিত। দূর মহাকাশের কোন নক্ষত্র থেকে আসা আলোর প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বলে দিতে পারেন সেই নক্ষত্রটিতে কি কি উপাদান আছে। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, আমাদের মহাবিশ্বে যা কিছু আছে তা মূলত আমাদের চিরচেনা জানা মৌলিক কোয়ার্ক, ইলেকট্রন, হিগস বোসন, রূপান্তরিত নিউক্লিয়ার, নিউক্লিয়াস, নিউট্রন, প্রোটন, ভূতুড়ে কণা ইলেকট্রন, হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, আয়রণ, পটাশিয়াম, গন্ধক, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদিসহ একাধিক মৌলিক কণা দ্বারা গঠিত। মনে করা হচ্ছিল এই কণার বাইরে মহাবিশ্বে আর কোনো প্রকার এনার্জি এবং ম্যাটারের অবকাশ নেই। পুরো মহাবিশ্বটাই যেন এই পরমাণু বা তার অতি-পারমাণবিক কণিকার সমন্বয়েই গঠিত। মহাবিশ্বের এই ফমোলজি বা গঠন বিজ্ঞান অন্ততঃ বিগত বিংশ শতাব্দির সত্তর দশকের প্রথম দিক পর্যন্ত মিথ বা বদ্ধমূল ধারণা আকারে টিকে ছিল।

একীভূতকরণ নাকি সহাবস্থান ?

বাস্তব জীবনে কোয়ান্টামের চাইতে নিউটনীয় ক্ল্যাসিক্যাল বল বিজ্ঞান সহায়ক। এ ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম বল বিজ্ঞান প্রত্যাহিক জীবনে সংবিধিবদ্ধতার ক্ষেত্রে জটিলতা বয়ে আনতে সহায়ক। বিশেষ করে সব বস্তু-পদার্থ আলাদা নাকি অভিন্ন? এ প্রশ্ন প্রত্যাহিক জীবনের যে স্বাচ্ছন্দতা তাকে ব্যাহত করে। নিউটনীয় ক্ল্যাসিক্যাল বল বিজ্ঞান সব বস্তু-পদার্থ আলাদা আলাদা। এমনকি অআকাশে যে অগণন তারা-নক্ষত্র এসব দেখতে অভিন্ন হলেও আসলে একেক তারার একেক নাম, ধরণ, প্রকৃতি-বৈশিষ্ট্য। কোয়ান্টাম বল বিজ্ঞানে মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু-পদার্থের পরম পরিণতি দুটি অতিপারমাণবিকতায় নিহিত। পারমাণবিকতা ২টি হচ্ছে ১) কোয়ার্ক ২) ইলেকট্রন। যদি তা-ই হয় তাহলে কোন্ পদার্থকে কোন্ নামে-ধামে ডাকা হবে? কোয়ার্ক না ইলেকট্রন? যদি তা-ই হয় তাহলে আম-কে কি নামে ডাকা হবে কোয়ার্ক না ইলেকট্রন? এই হলো এক সমস্যা। দ্বিতীয় সমস্যা হলো আমকেও যদি কোয়ার্ক বা ইলেকট্রন বলে ডাকি, কাঁঠালকেও তাই। জেনেটিক সমস্যা দেখা দেবে মানব ক্ষেত্রে। বিশেষ করে ডিএনএ-কে যদি জেনেটিক উৎস ধরে জাগতিক ক্ষেত্রে তা কার্যকর করা হয় তাহলে সন্তানের অপরাধে পিতা-মাতার একটা জেনেটিক দায়বদ্ধতা থেকে যায়। তাই বাস্তব ক্ষেত্রে কেবল উত্তরাধিকারী নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ডিএনএ জরুরী। অন্যথায় প্রত্যাহিক জীবনে নিউটনীয় ক্ল্যাসিক্যাল বল বিজ্ঞান সূত্রমতে সন্তান অআর পিতা পৃথক সত্বা। অআইন-আদালতেও তা বিবেচ্য।

অনুরূপ মহাকাশে মহাকর্ষ বলের কারণে আলো কিছুটা বেঁকে চলার অর্থ এই নয় যে, নিউটনীয় ক্ল্যাসিক্যাল বল বিজ্ঞান অচল হয়ে গেছে। বরং মধ্যপন্থায় সহাবস্থান হচ্ছেঃ পৃথিবীর বুকে আলোর সরল রেখায় গমনের ক্ষেত্রে নিউটনীয় বল বিজ্ঞান সচল অর্থাৎ কার্যকর, অআর মহাকাশের বুকে আলোর বেঁকে চলার অআইনস্টাইনীয় সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব সচল, বলবৎযোগ্য।

আলোর গতি আটকে আছে আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বে যার কারণে নিউট্রিনো সার্ণ কর্তৃক অপেরা প্রোজেক্টে অন্ততঃ ১৬ হাজার বার আলো থেকে ৬০ ন্যানো সেকেন্ড অগ্রগামী প্রমাণিত হলেও স্টিফেন হকিংসহ অনেক খ্যাতনামা বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতা E=mc2 তত্ত্বের পরিপন্থী বিবেচনায় নিউট্রনের এই অগ্রগামীতা প্রত্যাখ্যান করা হয়। এটা যদি সত্যি হয় তাহলে স্ট্যান্ডার্ড মডেল অকার্যকর হয়ে পড়বে, পদার্থ বিজ্ঞানের নতুন সূ্ত্রের প্রয়োজন হবে, প্রয়োজন হবে এ সংক্রান্ত নতুন পাঠ্য বইয়ের। এ ব্যাপার কি আসলে মশা মারতে কামান দাগানো নয় কি? কারণ, আলোর প্রকৃত গতি বিশেষ আপেক্ষিকতা E=mc2 তত্ত্বে ১লক্ষ ৮৬


হাজার ২শতের অধিক মাইল হওয়া সত্ত্বেও কেবল  ২ শতক-কে ফ্যারাকশন জনিত গণনার সুবিধার্থে  রাউন্ড ফিগার ১,৮৬০০০ মাইল ধরার ফলে যেখানে স্ট্যান্ডার্ড মডেলে অতিরিক্ত ২০০ মাইলে কোনো ব্যত্যয় না ঘটলেও ১,৮৬০০০ মাইলে মাত্র ৬০ ন্যানো সেকেন্ড বেশি হলেও তা না ধরে স্ট্যান্ডার্ড মডেল চলমান রাখতে অসুবিধা কোথায়? যদি অআবারও প্রমাণিত হয়, নিউট্রিনো কিংবা এ জাতীয় কণা অআলোর গতি ছাড়িয়ে গেছে তাতে CIRNN উদ্বেগের কারণ মনে করে না, বরং বিশেষ আপেক্ষিকতা E=mc2 তত্ত্বে বেঁধে দেওয়া আইনস্টাইনের আলোর গতিকে গ্রীন উইন্স মান সময়ের ন্যায় একক ধরে এই গতিকে Einstnian Standard Light Force (ESLF)” ঘোষণা করলেই যথেষ্ট।   

সির্ণ মনে করে, নিউট্রিনোকে আলোর ৬০ ন্যানো সেকেন্ড অগ্রগামিতা মডার্ণ কসমোলজিক্যাল স্ট্যান্ডার্ড মডেলের কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারবে না। কারণ, এমনিতে আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বেই আলোর প্রকৃত গতি ১ লক্ষ ৮৬ হাজার ২ শত মাইলেরও অধিক যা ৬০ ন্যানো সেকেন্ড হতে অনেক বড় ব্যাবধানের।

সুতরাং, CIRNN মনে করে, নিউট্রিনো, স্বপ্নিল ওয়ার্ম হোল, র‍্যাপ ড্রাইভ অআলোর গতি ছাড়ালেও স্ট্যান্ডার্ড মডেল অসংশোধিত থাকা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে কেবল করণীয় হচ্ছেঃ অবিলম্বে আইনস্টাইনের বেঁধে দেয়া আলোর গতিকে Einstein Standard Light Force (ESLF) ঘোষণা।

অতিপারমাণবিকতার পথে আধুনিক বিজ্ঞান

ডেমোক্রিটাস পরমাণুর শেষ পেরেক টুকে দিয়েছিলেন তার আবিস্কৃত অণুকে “আর ভাঙা যাবে না মর্মে অ্যাটম (Atom) নামকরণ করে। সম্ভবতঃ এটিই আনবিক বিজ্ঞানের প্রথম মূল্যায়ন-যা বহাল তবিয়তে চলছিল অন্ততঃ অ্যারিস্টটলীয় যুগের আগ পর্যন্ত। অ্যারিস্টটল ডেমোক্রিটাসের অ্যাটম তত্ত্বে বাধ সেধে তাকে ভেঙে মহাবিশ্বের গাঠনিক ধারাকে অন্ততঃ ৪ টুকরা করেছিলেন । টুকরা ৪টি হচ্ছেঃ ১. বাতাস ২. আগুন ৩. পানি এবং ৪. মাটি। অ্যারিস্টটলের বিশ্ব গঠন কেন্দ্রিক এই বিশ্বাস মধ্যযুগে জাবির ইবনে হাইয়ান আল আরাবীর যুগে আগ পর্যন্ত বলবৎ ছিল। জাবির ইবনে হাইয়ান মহাবিশ্বের ভিত্তি অ্যারিস্টটলীয় ৪ মাত্রিকতার স্থলে দ্বিমাত্রায় নামিয়ে এনেছিলেন জাবিরের বিশ্ব গঠনের বস্তুগত মাত্রা প্রধানতঃ ২টি যথাঃ ১) মার্কারি বা পারদ  এবং ২) সালফার।

উল্লেখ্য, মার্কারি বা পারদ নামে, আরেকটা সালফার। এই মার্কারি বা সালফার ঠিক আমাদের চেনা পারদ-সালফার নয়। মার্কারি প্রিন্সিপলটা হলো ‘ঠান্ডা’ ও ‘ভেজা’। অন্যদিকে সালফার হলো ‘গরম’ ও ‘শুকনো’। ইংরেজিতে যা Cool-moistHot-dry। এই চারটা উপ ধর্ম চার মৌলিক পদার্থের মাঝামাঝি নতুন একটা অবস্থানের নির্দেশ করে। এই সালফার-মার্কারি থিওরি অনুযায়ী এই চারটা ধর্মই তৈরি করে মূলতঃ সাতটা ধাতু যথাঃ  ১) স্বর্ণ ২) রৌপ্য ৩) তামা ৪)টিন ৫) লোহা ৬) সিসা ‌এবং ৭) পারদ।

মহাবিশ্বের প্রথম পর্যায় সারণি

অ্যারিস্টটলের চার মৌল এবং জাবির ইবনে হাইয়ানের সালফার-মার্কারিএ মিলেই তৈরি হয় বহুল প্রচলিত তালিকা। একটা বর্গাকৃতির চার কোণে চারটি মৌলিক পদার্থের এই তালিকাকেই বলা যায় প্রথম পর্যায় সারণি (First Periodical Table)

সুইস চিকিৎসা বিজ্ঞানী প্যারাসেলসাস

পরবর্তীতে এই সারণিতে নতুনত্ব যোগ করেন ষষ্ঠদশ শতকে সুইস চিকিৎসা বিজ্ঞানী প্যারাসেলসাস। তিনি মার্কারি-সালফার থিওরিতে ‘সল্ট’ বা লবণ যোগ করে আরেকটু বিস্তৃত তত্ত্ব বানান। সালফার-মার্কারি-সল্টের এই তত্ত্ব অনুসারে জাবিরের মতো শুধু ধাতুই নয়,  ওষুধসহ অন্য সব পদার্থও তৈরি হয় এসব ধর্ম দিয়েই।

পিয়েরে গ্যাসেন্দি

সপ্তদশ শতকে পিয়েরে গ্যাসেন্দি আবার ডেমোক্রিটাসের অবিভাজ্য পরমাণুর ধারণা ফিরিয়ে আনেন।

 

 

দে কার্তে

দে কার্তে প্রস্তাব করেন মেকানিক্যাল বা যান্ত্রিক বিশ্বের। মাঝখান দিয়ে রবার্ট বয়েল প্রমাণের চেষ্টা করেন, সল্ট বলে আসলে কিছু নেই। তিনিই প্রথম আলকেমি আর রসায়নের মধ্যে একটা রেখা টেনে দেন। এমনকি তাঁর ধারণাতেই তখন উঠে আসে পরমাণু-অণু-রাসায়নিক বিক্রিয়ার মতো কিছু ধারণার আভাস।

জোসেফ প্রিস্টলি-ল্যাভয়সিয়ে

কিন্তু এর মধ্যেই জোসেফ প্রিস্টলি বাতাসের গ্যাসগুলোকে আলাদা করতে সক্ষম হন। ল্যাভয়সিয়ে ১৭৭৭ সালে ৩৩টা মৌলিক পদার্থের তালিকা প্রকাশ করেন। প্রথমবার আলাদা করেন ধাতু ও অধাতুর মধ্যে।

জন ডাল্টন

১৮০৩ সালে জন ডাল্টন প্রস্তাব করেন ‘ডাল্টন’স ল’। এরপরই আস্তে আস্তে মৌলিক পদার্থের সত্যিকার ধারণা মানুষ বুঝতে শুরু করে। মৌলিক পদার্থগুলোকে আলাদা করতে শুরু করে। এরপর যত দিন গিয়েছে, মৌলিক পদার্থের সংখ্যা বেড়েছে। তত দিনে যেহেতু মানুষ বুঝে গিয়েছে, মৌলিক পদার্থই সব পদার্থ তৈরির মূল। তাই বিজ্ঞানীরা চিন্তা করেছেন, মৌলিক পদার্থগুলোকে জব্দ করতে পারলেই মহাবিশ্বের সবকিছুকে জব্দ করা সম্ভব। ফলে তাঁরা চেষ্টা করেছেন, মৌলিক পদার্থগুলোকে একসঙ্গে করে একটা তালিকা করে কোনো একটা ছাঁচে ফেলতে।

দিমিত্রি মেন্ডেলিভ

নানাজনের চেষ্টা শেষে বাজিমাত করেন মেন্ডেলিভ ১৮৬৯ সালে। ৬৩ মৌলের তালিকা দিয়ে। তিনি তাঁর তালিকা সাজিয়েছিলেন পারমাণবিক ভরের ওপর ভিত্তি করে। কারণ, তত দিনে মানুষ জেনে গেছে, প্রতিটা মৌলের একটা নির্দিষ্ট পারমাণবিক ভর আছে।

পারমাণবিক ভর ধরে সাজাতে গিয়ে মেন্ডেলিভ সুন্দর একটা প্যাটার্ন বের করে ফেলেন। কতগুলো সারি-কলামে ভাগ করে ফেলা যায় মৌলগুলোকে, তাতে তার ধর্মও মিলে যায় বেশ। সারিগুলোকে নাম দেন পিরিয়ড (Period), আর কলামগুলোকে গ্রুপ। পিরিয়ড আর গ্রুপ মিলে হয়ে আমাদের পর্যায় সারণি। মেন্ডেলিভ বাজিমাত করেন আসলে অজানা মৌলের ভবিষ্যদ্বাণী করে। তাঁর সারণিতে ফাঁকা রাখা জায়গায় যখন মৌলে খুঁজে পাওয়া যায়, তখন বিশ্বাস জন্মে, কিছু একটা নিশ্চয় আছে এই পর্যায় সারণির পেছনে। তখন মানুষ ভেবেছিল পারমাণবিক ভরই এই কারণ।

জে. জে. থমসন

 ১৮৯৭ সালে। সে বছর জে. জে. থমসন ইলেকট্রন আবিষ্কার করেন। এত দিন পরমাণুকে ধরা হয়েছিল অবিভাজ্য। অবিভাজ্য পরমাণুতে ইলেকট্রনের উপস্থিতি ঠিক স্বস্তিকর নয়। প্রথম দফায় ইলেকট্রনকে পদার্থের মধ্যে সুষমভাবে ছড়িয়ে দিয়ে পরমাণুর অবিভাজ্যতার ধারণা কিছুটা বাঁচানোর চেষ্টা হয়। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর শুরুতে রাদারফোর্ডের স্বর্ণপাত আর আলফা কণার পরীক্ষা নিশ্চিত করে দেয়, পরমাণু কোনো অবিভাজ্য জিনিস না। পরমাণুরও একটা গঠন আছে।

শুরু হয় নতুন ও অত্যাধুনিক রসায়নের এক যুগ

তারপর শুরু হয় নতুন ও অত্যাধুনিক রসায়নের এক যুগ। এর হাত ধরেই পদার্থবিজ্ঞানে আসে নতুন তত্ত্ব। কোয়ান্টাম তত্ত্ব, যা পদার্থবিজ্ঞানের আরও কিছু সমস্যার সমাধানে বেশ কার্যকর ভূমিকা দেখায়।

 

বিজ্ঞনী নিলস বোর, সামারফেল্ডরা

বিজ্ঞনী নিলস বোর, সামারফেল্ডরা আরেকটু এগিয়ে নেন পরমাণুর গঠন। আর পরমাণুর গঠন বুঝতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেন, ইলেকট্রন পরমাণুর নিউক্লিয়াসের চারপাশে কীভাবে স্তরে স্তরে অবস্থান করে। ওই স্তরগুলো মেলাতে গিয়ে দেখা যায়, পর্যায় সারণিতে এক গ্রুপের মৌলগুলো যে প্রায় একই ধর্ম দেখায়। তার মূলে আছে ওই পরমাণুর চারপাশে থাকা ইলেকট্রন বিন্যাস।

পারমাণবিক সংখ্যা আবিষ্কার

প্রথমে পর্যায় সারণি সাজানো হয়েছিল পারমাণবিক ভর অনুসারে। তখন তো মৌলের গঠন সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না, তাই ধারণা ছিল না আইসোটোপ সম্পর্কেও। আইসোটোপের উপস্থিতির কারণে বেশ কয়েকটি মৌলিক পদার্থের ভর–সংক্রান্ত একটা ঝামেলা ছিল। বেশি পারমাণবিক ভরের একাধিক মৌলকে অবস্থান দিতে হয়েছিল কম ভরের মৌলের আগে। সে সমস্যাও মিটে যায় যখন পারমাণবিক সংখ্যা আবিষ্কার হয়। পারমাণবিক সংখ্যা হলো কোনো একটা পরমাণুতে থাকা প্রোটনের সংখ্যা। আর এই প্রোটনসংখ্যাই একটা পরমাণু কী পদার্থ হবে, তার ভিত্তি।

একটা পরমাণুতে থাকে ইলেকট্রন, প্রোটন আর নিউট্রন। প্রোটন আর নিউট্রন থাকে পরমাণুর মাঝে, যাকে বলে নিউক্লিয়াস। ইলেকট্রনগুলো থাকে বাইরে, চারপাশে কতগুলো কোয়ান্টাম অরবিটালে। একটা পরমাণুর নিউক্লিয়াসে কতগুলো প্রোটন আছে তা-ই ঠিক করে দেয় ওইটা কিসের পরমাণু। যেমন ১১টা প্রোটন থাকলে সেটা সোডিয়াম, ১২টা প্রোটন থাকলে ম্যাগনেসিয়াম। তেমনিভাবে ১১৮টা প্রোটন থাকলে অগানেসন। প্রোটনের সঙ্গে নিউক্লিয়াসে থাকে নিউট্রন। নিউট্রনসংখ্যা সাধারণত প্রোটনের কাছাকাছি হয়।

এরপর আসে ইলেকট্রন। একটা সাধারণ পরমাণুতে যতগুলো প্রোটন থাকে, ইলেকট্রনও থাকে ঠিক ততটা। ইলেকট্রন যেহেতু নিউক্লিয়াসের বাইরে থাকে, মাঝেমধ্যে একটা–দুইটা ছুটে যেতে পারে বা একটা–দুইটা বাড়তিও হতে পারে। এই অবস্থাই হলো আয়নিত অবস্থা বা চার্জিত অবস্থা। ইলেকট্রন নিয়ে বা দিয়ে একটা পরমাণু খুব সহজেই ফিরে যেতে পারে তার আগের অবস্থায়

কৃত্রিম মৌল উৎপন্নের পথে আধুনিক বিজ্ঞান

খুঁজতে গিয়ে প্রকৃতিতে অনেকগুলোই পাওয়া গেছে। কিন্তু পাওয়া যায়নি টেকনিশিয়াম। ৪৩ পারমাণবিক সংখ্যার এই মৌলের অর্ধায়ু খুব কম। তাই শত কোটি বছরের পৃথিবীতে পৃথিবী গঠনের সময় উৎপন্ন হয়ে থাকলেও এত দিনে সবটাই ভেঙে অন্য কোনো পদার্থ হয়ে গেছে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ করে। শেষমেশ ১৯৩৭ সালে ল্যাবে বানানো গিয়েছে এই মৌল।

ল্যাবে টেকনিশিয়াম বানানোর পর বিজ্ঞানীরা অন্য না পাওয়া মৌলগুলো খুঁজেছেন গবেষণাগারে। ইউরেনিয়াম পর্যন্ত বাকি সবগুলোও তাঁরা বানিয়েছেন ল্যাবেই। এখন সাধারণ ঔৎসুক্য থেকেই প্রশ্ন আসে, প্রকৃতিতে অনেকগুলো মৌলই পাওয়া যায়। টেকনিশিয়াম বাদে ৯২ পর্যন্ত বেশ আছে। খুব অল্প পরিমাণে ৯৩ ও ৯৪-ও পাওয়া যায়। তাহলে পরের মৌলগুলো কি ল্যাবে বানানো যাবে? বিজ্ঞানীরা এ প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন। পরের মৌলগুলোও বানানো যায়। তাঁরা বানিয়েছেনও। প্রকৃতিতে কোথাও পাওয়া যায় না এমন ২৪টি মৌল ল্যাবরেটরিতে বানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

পর্যায় সারণি যদি দেখা যায়, তাহলে দেখা যাবে এখন সর্বশেষ মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা ১১৮। নাম, অগানেসন। এই ১১৮টা মৌলই মানুষ কোনো না কোনো সময় পর্যবেক্ষণ করেছে। এখন প্রশ্ন হলো, ল্যাবরেটরিতে ১১৯ বা পরের মৌলগুলো বানানো যাবে?

পর্যায় সারণিতে পর্যায় বা সারি আছে ৭টা। ১১৮ নম্বর মৌল আবিষ্কারের পর ৭টা পর্যায়ই পূর্ণ হয়ে গেছে। এর পরের মৌল, মানে ১১৯ বা পরের কোনো মৌল আবিষ্কার হলে তার অবস্থান হবে অষ্টম পর্যায়ে। মজার ব্যাপার হলো, শুরু থেকেই বর্তমান রূপের পর্যায় সারণির পর্যায় ছিল ৭টা। তাই অষ্টম পর্যায় একটা বড় ঘটনাই হবে পর্যায় সারণির জন্য। যদি ইলেকট্রন বিন্যাস দেখা হয়, তাহলে দেখা যাবে, ১১৯ নম্বর মৌল পাওয়া সহজ হওয়ার কথা নয়।

কৃত্রিম কণা তৈরির রেসিপিপ্রয়োজন এলিয়েন জাতীয় ভিন গ্রহবাসীর প্রযু্ক্তি

তারপরও সহজ একটি রেসিপি কিন্তু আছে ১১৯ নম্বর মৌল বানানোর। এ জন্য প্রথমে লাগবে বার্কেলিয়াম। বার্কেলিয়ামের পারমাণবিক সংখ্যা ৯৭। নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়, খুবই তেজস্ক্রিয় মৌল। কয়েক মিলিগ্রাম বার্কেলিয়াম নিয়ে তার ওপর আলোর বেগের এক–দশমাংশ বেগে টাইটেনিয়াম আয়ন ছুড়তে হবে। এভাবে যদি টানা এক বছর টাইটেনিয়াম আয়ন ছোড়া হয়, ১০১৮ টা টাইটেনিয়াম আয়নের আঘাতে একটা ১১৯ পারমাণবিক সংখ্যার পরমাণু উৎপন্ন হতে পারে। এই উৎপাদন বছরের যেকোনো মুহূর্তে হবে, তাই পুরো বছরই নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে, কারণ এটা বলা কঠিন যে ১১৯ মৌল কতক্ষণ স্থায়ী হবে। আগের মৌলগুলোর অভিজ্ঞতা বলে মিলি সেকেন্ডের ভগ্নাংশ স্থায়ী হবে, তারপর একটা আলফা আর একটা গামা কণা উৎপন্ন করবে, যা গিয়ে আঘাত করবে চারপাশে রাখা সিলিকন ডিটেক্টরে, ধরা পড়বে প্রথম ১১৯ নম্বর মৌল। শুধু পৃথিবীর নয়, সম্ভবত মহাবিশ্বেরই প্রথম হবে, যদি না কোনো এলিয়েন আগেই বানিয়ে থাকে।

দরকার হবে নতুন ধরনের কোনো প্রযুক্তি

বোঝাই যাচ্ছে, ১১৯-কে খুঁজে পাওয়া সহজ কোনো কাজ হবে না। জার্মানির বিজ্ঞানীরা ২০১২ সালে কয়েক মাস এই পদ্ধতিতে চেষ্টা করেছেন। রাশিয়া আর জাপানের বিজ্ঞানীরাও চেষ্টা করেছেন ১২০-কে খুঁজতে। এখন পর্যন্ত কেউ পারেননি ১১৯ বা ১২০ উৎপাদন করতে।

মেন্ডেলিভ ১৮৬৯-এ পর্যায় সারণি প্রকাশ করার পর থেকে প্রতি দুই থেকে তিন বছরে গড়ে একটা করে মৌল যোগ হয়েছে পর্যায় সারণিতে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, একটা স্থবিরতা এসেছে নতুন মৌল খুঁজে পেতে। শেষ নতুন মৌল শনাক্ত হয়েছিল ২০১০ সালে, নাম টেনেসাইন, পারমাণবিক সংখ্যা ১১৭। শুধু স্থবিরতাই নয়, ১১৯ বা ১২০ হয়তো পাওয়া যাবে। অনেক ধৈর্যশীল, আধুনিক কোনো গবেষণাগারে। কিন্তু এর পরের মৌল, অর্থাৎ ১২১ বা আরও বেশি পারমাণবিক সংখ্যার মৌল আমাদের বর্তমান জানা প্রযুক্তিতে পাওয়া সম্ভব না বলেই মনে করছেন বেশির ভাগ বিজ্ঞানী। এ জন্য দরকার হবে নতুন ধরনের কোনো প্রযুক্তি।

সর্বশেষ  ২০১২ সালে সার্ণ কর্তৃক  হিগস বোসন কণা অআবিস্কারের পর বিজ্ঞানীরা গবেষণারত ছিলেন সুপার সেমিট্রির পেছনে। ততদিনে বিজ্ঞানীরা টের পান অতিপারমাণবিক ডার্ক এনার্জ অআর ডার্ক ম্যাটারের যা বিজ্ঞানীদের কিংকতর্ব্যবিমুঢ় করে তোলে। 


Comments

Popular posts from this blog

যে জাতির রাজা-বাদশাহরা ছিলেন বিজ্ঞানী!

সেন্টার অব ইসলামিক রিসার্চ ফর নিউক্লিয়াস অ্যান্ড নিউরণ (CIRNN )

Update 8 Dec, 2023