ইসলামী বিজ্ঞান-প্রযুক্তি তথ্য ব্যাংক (বাংলাদেশ) লিঃ ০২
বিজ্ঞান যা পারে
প্রকৃতিতে
এত এত কণা। কিন্ত্ত কণাগুলি কী দিয়ে তৈরি কেউ জানে না। বিজ্ঞানীরা শুধু জানে
কণাগুলি প্রাকৃতিকভাবে কোন্ পদ্ধতি-প্রক্রিয়ায় কীভাবে সৃষ্টি বা উদ্ভব। বিজ্ঞানীরা
কখনও ডেমোক্রিটাসের মাধ্যমে জেনেছে যে , এসব বস্ত্ত কণারা অ্যাটম দিয়ে তৈরি।
অ্যারিস্টটলের মাধ্যমে জেনেছে এই মহাবিশ্ব মাটি, আগুন, বাতাস এবং পানি দ্বারা
সৃষ্ট। জাবের ইবনে হায়ানের মাধ্যমে জেনেছে মার্কারি (পারদ) নামে, আরেকটা
সালফার। দিমিত্রি মেন্ডেলিফ কর্তৃক প্রণীত মৌলিক পদার্থসমূহের ভৌত
ও রাসায়নিক ধর্ম বিশ্লেষণপূর্বক মৌল সমূহের পর্যায়ভিত্তিক প্রথম পর্যায় সারণী, চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটা রমন প্রণীত
দ্বিতীয় পর্যায় সারণী রমন
ইফেক্ট তত্ত্বের মাধ্যমে।
বিজ্ঞান যা পারে না
প্রকৃতিতে
এত এত কণা। কিন্ত্ত কণাগুলি কী দিয়ে তৈরি বিজ্ঞানীরা আজও জানেন না। তাই বিজ্ঞানীদের নিঃসংকোচ স্বীকারোক্তিঃ
বিজ্ঞান না পারে আদি, আসল (খাঁটি-বিশুদ্ধ), অকৃত্রিমভাবে অণু-পরমাণু পরিমাণ কিছু
সৃষ্টি করতে অথবা না পারে তা পুরোপুরি ধ্বংস করতে।
এ
প্রসঙ্গে আলবার্ট আইনস্টাইন বলেনঃ পদার্থ
একেবারে চুপসে যেতে পারে না। একসময় সূক্ষ্ণ বিন্দুতে গিয়ে থেমে যাবে পদার্থটি যাকে
পদার্থ বিজ্ঞানে পরম বিন্দু বা সিঙ্গুলারিটি বলা হয়।
প্রাণ-প্রাণীর
কথা
মানব দেহ গড়ে প্রায় ৮০ ট্রিলিয়ন কোষ নিয়ে গঠিত। প্রতিটি কোষ পালন
করে তাদের নিজস্ব ভূমিকা। এসব কোষের কার্যকারিতার জন্য প্রয়োজন অক্সিজেন। বাতাস থেকে
অক্সিজেন নাকের মাধ্যমে দেহের ফুসফুসে প্রবেশ করে লোহিত রক্ত কণিকায় পৌঁছে। রক্ত সন্চালনের
মাধ্যমে এই লোহিত কণিকা দেহের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ে। রক্তের ৪৫ শতাংশই লোহিত কণিকা।
রক্তের বাকী ৫৫ শতাংশ-কে বলা হয় প্লাজমা-যাতে রয়েছে ১০ ভাগের মতো গ্যাসীয় উপাদান,
পুষ্টি উপাদান আর বর্জ্য পদার্থ। লোহিত কণিকাকে বলা হয় হিমোগ্লোবিন। আয়রণ বা লৌহ
কণিকার উপাদানে হিমোগ্লোবিন গঠিত। হিমোগ্লোবিনের কারণে রক্ত লাল বর্ণ হয়।
আইনস্টাইন মনে করেন, সব ধরণের শক্তিই হলো মহাকর্ষের
উৎস। কারণ সব শক্তিরই একটা কার্যকর ভর রয়েছে। (বিজ্ঞানচিন্তা, জানুয়ারি, ২০২১,পৃষ্ঠা
৬৩)।
আইনস্টাইনের ভরশক্তির সমীকরণ
বস্তু এবং
শক্তিঃ জমে থাকা শক্তি জমাটবদ্ধ বস্তুর
মতই (আইনস্টাইন)।
“ভর এবং শক্তিঃ সব শক্তিরই একটা কার্যকর ভর রয়েছে”
(আইনস্টাইন)। (বিজ্ঞানচিন্তা, জানুয়ারি, ২০২১,পৃষ্ঠা ৬৩)।
“ভর ভেক বদল করে শক্তিতে রূপান্তিরত হয়” (বিজ্ঞানচিন্তা,
মার্চ, ২০২০,পৃষ্ঠা ২০)।
“মহাকর্ষীয় ভর বলে আমরা যেটাকে জানি, যার কারণে
আমাদের ভারী ও হালকা অনুভূতি হয়, সেটা আসলে ওজন (বিজ্ঞানচিন্তা, মার্চ, ২০২০, বর্ষ
৪, সংখ্যা ০৬, পৃষ্ঠা ২০)।
মহাকর্ষ বল শুন্য কোনো স্থানের কল্পনা করাও অসম্ভব
(বিজ্ঞানচিন্তা, মার্চ, ২০২০,পৃষ্ঠা ২১)।
“মহাকর্ষ বলের প্রাবল্য যেখানে কম, সেখানে আপনার
ওজন কম হবে, নিজেকে তত হালকা মনে করবেন আপনি। আর মহাকর্ষ প্রাবল্য খুব বেশি যেখানে,
সেখান থেকে পা তুলতেই আপনি হিমশিম খাবেন” (বিজ্ঞানচিন্তা, মার্চ, ২০২০,পৃষ্ঠা ২১)।
“পরমাণু তৈরি হয় ইলেকট্রন আর প্রোটন দিয়ে। অন্য
দিকে প্রোটন-নিউট্রন তৈরি হয় কোয়ার্ক দিয়ে” (বিজ্ঞানচিন্তা, মার্চ, ২০২০, বর্ষ ৪,
সংখ্যা ০৬, পৃষ্ঠা ২১)।
“সব মৌলিক পদার্থের পরমাণুর ভেতর ইলেকট্রন ও প্রোটনের
সংখ্যা এক নয়, প্রতিটির আলাদা” (বিজ্ঞানচিন্তা, মার্চ, ২০২০, বর্ষ ৪, সংখ্যা ০৬, পৃষ্ঠা
২১)।
“তাই এক মৌলের পরমাণুর সঙ্গে আরেক মৌলের পরমাণুর
ভরের পার্থক্য দেখা দেবে এটা নিশ্চিত” (বিজ্ঞানচিন্তা, মার্চ, ২০২০, বর্ষ ৪, সংখ্যা
০৬, পৃষ্ঠা ২১)।
“পরমাণুকে ভাঙলে শেষ পর্যন্ত যা পাওয়া যাবে তা হচ্ছে
কোয়ার্ক আর ইলেকট্রন” (বিজ্ঞানচিন্তা, মার্চ, ২০২০, বর্ষ ৪, সংখ্যা ০৬, পৃষ্ঠা ২১)।
কোয়ার্ক আর ইলেকট্রন আসলো কোত্থেকে?
“পরমাণু জগতে এত এত কণা, কিন্তু এসব কণা কি দিয়ে
তৈরি কেউ জানে না” (বিজ্ঞানচিন্তা)।
মহাকর্ষ
অনেক বড় পরিসরে মহাকর্ষ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আবার বিপুল ভরের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ এই বল (বিজ্ঞানচিন্তা)
গ্রহ-নক্ষত্র ও ছায়াপথের চলাফেরাতে
বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বলের বড় কোনো ভূমিকা নেই (বিজ্ঞানচিন্তা)
আইনস্টাইন মনে করেন, সব ধরণের
শক্তি হলো মহাকর্ষের উৎস। কারণ, সব শক্তিরই একটা কার্যকর ভর রয়েছে (বিচি, জানুয়ারি
২০২১, পৃঃ ৬৩)।
মহাকর্ষ বাদে অন্য তিনটি বলের
মধ্যে এক ধরণের প্যাটার্ণ দেখা যায় (বিচি নভেম্বর, ২০২১, পৃঃ ৫১)।
দেখা যাচ্ছে, নানা দিক দিয়ে মহাকর্ষ
বেশ অস্বাভাবিক। তাহলে প্রশ্ন আসে মহাকর্ষ এ রকম আলাদা কেন? এর একমাত্র উত্তরঃ আমরা
জানি না (বিচি নভেম্বর, ২০২১, পৃঃ ৫১)।
বিজ্ঞানীদের দাবী, এমন প্রশ্ন রয়েছে যার উত্তর এ বিশ্বে পাওয়া যাবে
না।
মহাকর্ষ
►নিউটনের সূত্রমতে সূর্য ও পৃথিবীর
মাঝখানে মহাকর্ষ বল এমনভাবে থাকে যেন অদৃশ্য কোনো দড়ি দিয়ে এই বস্ত্ত দু'টিকে বেঁধে রাখার ফলে সূর্যের
চারপাশের কক্ষপথে চিরকালের জন্য বাধা পড়ে পৃথিবী (বিচি প্রাগুক্ত ৬৩)
►আপেক্ষিকতার সাধারণতত্ত্ব চূড়ান্তভাবে
প্রণয়নের আগেই অআইনস্টাইনবুঝতে পারেন যে, স্থান-কালের বক্রতার কারণে দুই নক্ষত্রের
অআলো সূর্যের পাশ দিয়ে পৃথিবীতে অআসার সময় তার গতিপথ বেঁকে যায়। এতে স্থান কিছুটা
বেঁকে যাওয়ায় অআলোও বেঁকে চলে। আপেক্ষিকতার সাধারণতত্ত্বের সারমর্ম হলোঃ বস্ত্ত স্থান-কালকে
কিভাবে বাঁকতেহবেঅআর বক্রতা স্থান-কাল-বস্তুকে বলে কীভাবে চলতে হবে (বিচি প্রাগুক্ত
৬৩)
►আইনস্টাইনের তত্ত্ব মতে,বক্র
স্থান-কালই হলো মহাকর্ষ। অআমাদের স্থান চারমাত্রিক।কিন্ত্ত ত্রিমাত্রিক জীব হওয়ায়
কারণে স্থান কালের এইউপত্যকাকে অআমরা বুঝতে পারি না। সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর গতি ব্যাখ্যা
করতে আমাদের তাই এতকাল মহাকর্ষের মতো একটা বস্ত্ত উদ্ভাবন করতে হয়েছে (বিচি প্রাগুক্ত
৬৩)
রহস্যময় মহাকর্ষের সঠিক ব্যাখ্যাকী?
এই বল দূর্বল কেন? কেন অন্য বলগুলো মতো নয়? এর কারণ এমনও হতে পারে,মহাকর্ষ হয়তো
বিশেষ বল ।
মহাকর্ষকে অন্য বলের মতো হতে হবে কিংবা একটি মাত্র তত্ত্ব দিয়ে
সব কিছু ব্যাখ্যা করতে হবে এমনটা নাও হতে পারে। বড় দৃষ্টিভঙ্গির দিকে অআমাদের মন খোলা রাখতে হবে। কারণ, মহাবিশ্বের
মৌলিক কিছু সত্য সম্পর্কে আমরা এখনো অন্ধকারে রয়ে গেছি (টানে সবাইকে কিন্ত্ত জড়ায় না, (বিচি,
নভেম্বর, ২০১৯, বর্ষ ৬, সংখ্যা ২, পৃষ্ঠা৫৪)।
(সি.আই.আর.এন.এন.মনে করেঃ মহাকর্ষের
মৌলিক সত্য এটাও হতে পারে যে, মহাকর্ষ চাপে সবাইকে কিন্ত্ত টানে না)
আয়রণ বা লৌহ কণিকা শুধু রক্তে নয়, দেহেরও অন্যতম খনিজ উপাদান। মানব
দেহে এত পরিমাণ আয়রণ বা লৌহ কণিকা থাকে যদ্বারা একটি বড় মাপের পেরেক তৈরি সম্ভব যা
দ্বারা একজন মানুষকে গেঁথে আটকানো যাবে বড়শিঁর মাছের মতো করে। মাটিতেও রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম
বা চৌম্বকীয় উপাদান। মানব দেহেও বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বলে কারণে কিংবা অন্য কারণে হোক
মানব দেহেও ম্যাগনেট রয়েছে। ফলে পৃথিবীতে আটকে রাখার জন্য মাটির উপাদানগত ভূমিকা এবং
দেহের উপাদান অভিন্ন হওয়ায় মাটি কখনও দেহকে আকর্ষণ করতে পারে না। না আয়রণিক না ম্যাগনেটিক
কোনো ভাবে নয়। তাহলে আমাদের ভূত্বকে লেগে থাকার ক্ষেত্রে একমাত্র ভূমিকা দেখা যায়
দৈহিক ওজন বা ভরের।
দু'টি কণাকে একসঙ্গে রাখা হলে সেগুলোর মধ্যকার মহাকর্ষ বল প্রায় শূন্য
হতে দেখা যায়। আর তখন সেখানে বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বল, সবল ও দূর্বল পারমাণবিক বল অনেক
বেশি শক্তিশালী ।(বিচি,
নভেম্বর, ২০২১, পৃঃ ৫৩)।
ব্ল্যাকহোল
পরম বিন্দু কেবল কোনো নক্ষত্রের
সমাপ্তিই নির্দেশ করে না, বরং পুরো মহাবিশ্বের গঠনের সূচনা সম্পর্কেও মৌলিক ধারণার
নির্দেশক (বিচি, মার্চ, ২০২০, পৃষ্ঠা ৪০)।
বিশাল ভরের কোনো নক্ষত্র জীবনের
শেষ দশায় এলে এদের ভেতরে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া কমে যেতে থাকে। তখন ভেতরের বস্ত্ত কণাগুলো
পরস্পরের খুব কাছাকাছি এসে পড়ে। ফলে আরও বাড়তে থাকে এদের মধ্যে ক্রিয়াশীল মহাকর্ষ বল।
এতে বস্ত্ত কণাগুলো অআরও কাছাকাছি অআসতে শুরু করে। এ প্রক্রিয়া দীর্ঘ মেয়াদে চলতেই
থাকে। এক সময় অবস্থা এমন হয় যে, গোটা নক্ষত্রের সব ভর একটা বিন্দুতে এসে মিলিত হয়।
সেই বিন্দুটির মহাকর্ষ বল তখন এতটাই বেশি হয় যে, এর চারপাশের স্থান-কাল বেঁকে যায় অসীম
মাত্রায়। সে মাত্রায় ১০ লাখ ব্যাসার্ধের সূর্য শোয়ার্জসিল্ড
ব্যাসার্ধে দাঁড়াবে মাত্র ৩ কিলোমিটারে। পৃথিবীর আকৃতি হবে মাত্র ১ সেন্টিমিটারে সূঁচের
আগার ন্যায় ক্ষুদ্র (তথ্যসূত্রঃ বিচি অক্টোবর, ২০১৯, বর্ষ ৪, সংখ্যা-০১, পৃষ্ঠা ৩৫)।
অসীম ভরের এক পরম বিন্দু, যেখানে ভেঙ্গে পড়ে পদার্থ বিজ্ঞানের সব সূত্র (তথ্যসূত্রঃ বিচি অক্টোবর, ২০১৯, বর্ষ ৪, সংখ্যা-০১, পৃষ্ঠা ৩৫)।
উল্লেখ্য, একসময় গুটিয়ে ফেলা হবে মহাবিশ্ব। রাখা হবে ডান পার্শ্বে। দরাজ কন্ঠ
বলাহবেঃ কোথায় আজ দোর্দন্ডপ্রতাপশালীরা?
স্থান-কালের বক্রতা অনেক গভীর
থেকে গভীরতর হলে এবং ক্রমেই অসীম হয়ে গেলে, সেখানে স্থান ও কালের প্রচলিত নিয়ম-কানুন
আর প্রয়োগ করা যায় না।(বিচি মার্চ, ২০২০, পৃষ্ঠা ৪০)।
ব্ল্যাকহোল
মহাকাশের
কোনো বস্ত্ত যদি একটা নির্দিষ্ট ক্রান্তীয় ব্যাসার্ধে সংকুচিত করে ফেলা সম্ভব হয়
তাহলে স্থান-কাল এত বেশি বেঁকে যাবে, যেটা আর নিছক উপত্যকার চেহারায় থাকে না। হয়ে যায়
একটা গর্ত। যাকে বলা যা মহাকাশের তলা বিহিন কুয়া। ক্রান্তিয় এই পরম সংকুচিত ব্যাসার্ধকে
বলা হয় শোয়ার্জসিল্ড ব্যাসার্ধ। ১০ লাখ ব্যাসার্ধের সূর্য শোয়ার্জসিল্ড ব্যাসার্ধে
দাঁড়াবে মাত্র ৩ কিলোমিটারে। পৃথিবীর আকৃতি হবে মাত্র ১ সেন্টিমিটারে। কার্ল শোয়ার্জসিল্ড
আইনস্টাইনের সদ্য প্রকাশিত সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব ব্যবহার করে ১৯১৫সালের ডিসেম্বর মাসে সর্বপ্রথম ব্ল্যাকহোলের
ধারণা দেন।
২০১৯ সালের ২৬ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ২২ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের
লাইগো ও ইতালির ভার্গো-২ মহাকর্ষ তরঙ্গের ডিটেক্টরে একটি তরঙ্গ ধরা পড়েছে। এ তরঙ্গটি
আগে শনাক্ত করা তরঙ্গ থেকে আলাদা। বিজ্ঞানীদের ধারণা, একটি কৃষ্ঞ গহব্বর ও একটি নিউট্রন
স্টারের সংঘর্ষ থেকে এ তরঙ সৃষ্টি হয়েছে, (বিচি মে, ২০১৯)।
►আমরা যা জানি, যা বুঝি কিংবা
যা কল্পনা, চিন্তা-ভাবনা করি তা তাত্ত্বিক। কিন্ত্ত বাস্তবে তা না-ও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ
ব্ল্যাকহোল বিজ্ঞান মনস্ক এমন ব্যক্তির নিকট এই শব্দটি অজানা থাকার কথা নয়। ব্ল্যাক
হোল শব্দগুচ্ছটা বেশ সরল মনে হয়। বাস্তবে মহাজাগতিক এ বস্ত্তটির প্রকৃতি সম্পর্কে
কল্পনা করাও কঠিন না, (বিচি, মার্চ, ২০১৯, বর্ষ ৬, সংখ্যা ২, পৃষ্ঠা ৩৯)।
যখন স্থান ও কালের প্রচলিত নিয়ম-কানুন প্রয়োগ
করা যায় না।
স্থান-কালের বক্রতা অনেক গভীর
থেকে গভীরতর হলে এবং ক্রমেই অসীম হয়ে গেলে, সেখানে স্থান ও কালের প্রচলিত নিয়ম-কানুন
আর প্রয়োগ করা যায় না।(বিচি মার্চ, ২০২০, পৃষ্ঠা ৪০)।
আলোর
চাইতে অধিক গতি অর্জন করতে অসীম পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন....”
আইনস্টাইন তাঁর বিশেষ আপেক্ষিকতা
তত্ত্বে বলেনঃ “কোনো বস্ত্তর গতি আলোর গতির যত কাছাকাছি যাবে, ততই মনে হবে সেটা
যেন ভারী হয়ে যাচ্ছে। যদি সেই বস্ত্ত অআলোর গতির একদম কাছাকাছি চলে যায়, তাহলে সেটা
অসীম ভর সম্পন্ন বস্ত্তর মতোই ভারী হয়ে যাবে। তখন এর চেয়ে আরও গতি অর্জন করতে হলে
অসীম পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন।”
CIRNN মনে করে আইনস্টাইনের এ মন্তব্যে
নিহিত আছে শর্ত সাপেক্ষে আলোর প্রচলিত মাত্রার (সেকেন্ডে ১,৮৬০০০ মাইল) অতিরিক্ত মাত্রা
অর্জনের সম্ভাবনা তত্ত্ব। ২০১২ সালে সার্ণ কর্তৃক ২৭ কিঃমি পরিধির কণা চূর্ণকরণ সাইক্লোটন
যন্ত্র ল্যার্জ হ্যাড্রনে ৬০, হাজার কম্পিউটার এবং ৫০০ কোটি পাউন্ড ব্যয়ে লক্ষ গুণ
সৌর তাপমাত্রা অর্জনে সেকেন্ডে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কম্পন সৃষ্টি করে বিলিয়ন বিলিয়ন প্রোটন
কণার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটিয়ে প্রায় আলোর গতি উৎপন্ন করে কৃত্রিমভাবে হিগস বোসন কণা
আবিস্কার করা হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, আরও উন্নত বৃহৎ যন্ত্রের সাহায্যে অসীম শক্তিতে
প্রোটন কণার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটালে আইনস্টাইনের E=mc2 তত্ত্বে বর্ণিত আলোর নির্ধারিত গতি অতিক্রম করা
সম্ভব। এ ধারণায় বর্তমানে ওয়ার্ম হোল, র্যাপ ড্রাইভের মাধ্যমে মুহুর্তের মধ্যে মহাবিশ্ব
ভ্রমণে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী ।
CIRNN আরও মনে করে আলোর গতি অতিক্রমকারী
সম্ভাব্য কণাটি হতে পারে নিউট্রিনো জাতীয়।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সার্ণ কর্তৃক অপেরা প্রজেক্টের আওতায় এক
গবেষণায় জানা যায় যে, নিউট্রিনোর গতি আলোর অন্ততঃ ৬০ ন্যানো সেকেন্ড বেশি। পরে অবশ্য
বলা হয় এটি ঘটেছে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে।
উল্লেখ্য, মহাবিশ্বে নিউট্রিনো
নামের একটি অদ্ভূতুড়ে ও অসামাজিক কণা আছে। কয়েক আলোকবর্ষ জুড়ে পুরু সিসার পাত ভেদ
করেও এই কণা নির্বিঘ্নে অনায়াসে চলে যেতে পারে ।(বিচি নভেম্বর, ২০২১, বর্ষ ৬, সংখ্যা
২, পৃঃ ৫৩)।
কোনো কোনো বিজ্ঞানী মনে করেন, আলোর গতির চেয়ে বেশি গতি সম্পন্ন
বস্ত্ত কণা থাকতে পারে।
স্ট্যান্ডার্ড মডেল
বর্তমানে প্রমাণিত স্ট্যান্ডার্ড
মডেল প্রকৃতির চারটি
মৌলিক বলের তিনটিকে যথা বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বল, সবল এবং দূর্বল নিউক্লিয় বল-কে একীভূত
করতে পারলেও মহাকর্ষ এখনো আলাদাই রয়ে গেছে। তাছাড়া বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বলের কণা ফোটন,
সবল নিউক্লিয় বলের কণা গ্লুয়ন এবং দূর্বল নিউক্লিয় বলের কণা w, w+, zo আবিস্কৃত হলেও বিজ্ঞানীদের
ধারণাকৃত মহাকর্ষ বলের কণা গ্র্যাভিটন এখন পর্যন্ত আবিস্কৃত হয়নি। মড়ার উপর খাড়ার ঘায়ের
মতো যোগ হয়েছে ডার্ক এনার্জি ও ডার্ক ম্যাটার। (বিচি জুন, ২০১৯, পৃষ্ঠা ৩৮)।
সি.আই.আর.এন.এন মনে করে আইনস্টাইনের এ মন্তব্যে নিহিত আছে শর্ত সাপেক্ষে আলোর প্রচলিত মাত্রার অতিরিক্ত মাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা তত্ত্ব। ২০১২ সালে সার্ণ কর্তৃক ২৭ কিঃমি পরিধির কণা চূর্ণকরণ সাইক্লোটন যন্ত্র ল্যার্জ হ্যাড্রনে ৬০, হাজার কম্পিউটার এবং ৫০০ কোটি পাউন্ড ব্যয়ে লক্ষ গুণ সৌর তাপমাত্রা অর্জনে সেকেন্ডে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কম্পন সৃষ্টি করে বিলিয়ন বিলিয়ন প্রোটন কণার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটিয়ে প্রায় আলোর গতি উৎপন্ন করে কৃত্রিমভাবে হিগস বোসন কণা আবিস্কার করা হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, আরও উন্নত বৃহৎ যন্ত্রের সাহায্যে অসীম শক্তিতে প্রোটন কণার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটালে অআইনস্টাইনের ই.এমসি স্কয়ারের অআলোর নির্ধারিত গতি অতিক্রম করা সম্ভব। এ ধারণায় বর্তমানে ওয়ার্ম হোল, র্যাপ ড্রাইভের মাধ্যমে মুহুর্তের মধ্যে মহাবিশ্ব ভ্রমণে বিজ্ঞানীরা সক্রিয় ।
কোনো
কোনো বিজ্ঞানী মনে করেন, আলোর গতির চেয়ে বেশি গতি সম্পন্ন বস্ত্ত কণা থাকতে পারে।
(বিচি প্রাগুক্ত পৃঃ ১৯)
সি.আই.আর.এন.এন মনে করে সম্ভাব্য কণাটি হতে
পারে নিউট্রিনো। উল্লেখ্য, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সার্ণ কর্তৃক অপেরা প্রজেক্টের
আওতায় এক গবেষণায় জানা যায় যে, নিউট্রিনোর গতি আলোর অন্ততঃ ৬০ ন্যানো সেকেন্ড বেশি।
পরে অবশ্য বলা হয় এটি ঘটেছে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে।
মহাবিশ্বে নিউট্রিনো নামের একটি অদ্ভূতুড়ে
ও অসামাজিক কণা আছে। কয়েক আলোকবর্ষ জুড়ে পুরু সিসার পাত ভেদ করেও এই কণা নির্বিঘ্নে
অনায়াসে চলে যেতে পারে ।(বিচি নভেম্বর, ২০২১, বর্ষ ৬, সংখ্যা ২, পৃঃ ৫৩)।
প্রাণ-প্রাণীর
কথা
মানব দেহের কোষের অভ্যন্তরে নিহিত কতিপয় খনিজ উপাদান হচ্ছে পটাশিয়াম,
সালফার, সোডিয়াম, ক্লোরিন, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি। প্রত্যেক খনিজ পদার্থই ধনাত্মক
কিংবা ঋণাত্মক আধান (চার্জ) দ্বারা গঠিত।
অতি উচ্চশক্তির চৌম্বক ক্ষেত্র পৃথিবীর বস্ত্ত পদার্থের অণু-পরমাণুর
পরতে পরতে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে থাকে। বিশেষ করে এই চৌম্বক ক্ষেত্রের মান একটি
নির্দিষ্ট মানের চেয়ে বেশি হলে তা যে কোনো পরমাণুর চৌম্বক ভ্রামক বা মোমেন্টের ওপর
সরাসরি কাজ করে এবং একেবারে অবিন্যস্ত চৌম্বক ভ্রমকগুলোকেও একই দিকে ঘুরিয়ে নিতে পারে।
এর ফলে পদার্থটি অস্থায়ী চৌম্বকত্ব লাভ করে। সেমতে বিচরণশীল সকল প্রাণী কম বেশি চুম্বকত্বের
অধিকারী। (বিজ্ঞানচিন্তাঃ মার্চ ২০২০, পৃষ্ঠা ৮৬)।
আমাদের দেহের জৈব রাসায়নিক উপাদান এনজাইম শত শত অ্যামিনো অ্যাসিডের
সমন্বয়ে গঠিত। অনেক এনজাইমের মধ্যে ধাতব পরমাণু আছে। ওই ধাতব পরমাণুই ঠিক করে দেয় এনজামটি
কিভাবে ক্রিয়াশীল হবে দেহে। আমাদের দেহের অস্থিমজ্জা বা হাঁড়ে প্রতি সেকেন্ডে ২০ লক্ষেরও
বেশি লোহিত কণা তৈরি হয়। রক্তের কাজ অনেক। ক) দেহের প্রতি কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া
খ) দেহের প্রতি কোষে বিদ্যমান কার্বন ডাই অক্সাইড পরিস্কার করা গ) খাবার হজমে সহায়তা
করা ঘ) দেহে পুষ্টি যোগানো ঙ) শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখা চ) ফাগো সাইট কোষের মাধ্যমে
অ্যান্টি বডির কাজ করা ছ) বাইরের ক্ষতিকর জীবানু মেরে ফেলা ইত্যাদি (বিজ্ঞান চিন্তা)।
পরমাণুতে ইলেকট্রন আর প্রোটনগুলো
বিদ্যুৎ চুম্বকীয় বলের সুতায় বাঁধা।
পৃথিবীর
ভূত্বকে আমাদের দেহ লেগে/আটকে থাকার রহস্য কী?
পৃথিবীতে যেভাবে আমরা অতি স্বাচ্ছন্দে পা ফেলে হাঁটতে পারি, এগিয়ে
যাই। অ্যাপেলো -১১ এর নভোচারিরা সেরূপ স্বাচ্ছন্দে হাঁটতে পারেন নি। পীঠে ভারি নভো
সাজসরন্জঞাম থাকা সত্ত্বেও তারা পিঙপঙ বলের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে চলছিলেন । কারণ পৃথিবীর
চাইতে চাঁদের ভর অন্ততঃ ৮.৫০ (আট দশমিক পাঁচ শূন্য) নিউটন (প্রায় আশি ভাগের এক ভাগ)
কম। চাঁদের অভিকর্ষ ত্বরণ মাত্রা ১.৬ অর্থাৎ পৃথিবীর ছয় ভাগের একভাগ। চাঁদের নিজস্ব
চৌম্বক ক্ষেত্রও পৃথিবীর চাইতে তুলনামূলক কম (আমাদের ছোট চাঁদ, মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান)।
আয়রণ
বা লৌহ কণিকা শুধু রক্তে নয়, দেহেরও অন্যতম খনিজ উপাদান। মানব দেহে এত পরিমাণ আয়রণ
বা লৌহ কণিকা থাকে যদ্বারা একটি বড় মাপের পেরেক তৈরি সম্ভব যা দ্বারা একজন মানুষকে
গেঁথে আটকানো যাবে বড়শিঁর মাছের মতো করে। মাটিতেও রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম বা চৌম্বকীয়
উপাদান। মানব দেহেও বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বলে কারণে কিংবা অন্য কারণে হোক মানব দেহেও ম্যাগনেট
রয়েছে। ফলে পৃথিবীতে আটকে রাখার জন্য মাটির উপাদানগত ভূমিকা এবং দেহের উপাদান অভিন্ন
হওয়ায় মাটি কখনও দেহকে অআকর্ষণ করতে পারে না। না আয়রণিক না ম্যাগনেটিক কোনো ভাবে
নয়। তাহলে আমাদের ভূত্বকে লেগে থাকার ক্ষেত্রে একমাত্র ভূমিকা দেখা যায় দৈহিক ওজন বা
ভরের।
দু'টি কণাকে একসঙ্গে রাখা হলে সেগুলোর মধ্যকার
মহাকর্ষ বল প্রায় শূন্য হতে দেখা যায়। অআর তখন সেখানে বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বল, সবল ও দূর্বল
পারমাণবিক বল অনেক বেশি শক্তিশালী ।(বিচি, নভেম্বর, ২০২১, পৃঃ ৫৩)।
►স্ট্যান্ডার্ড
মডেলের সাহায্যে আধুনিক কসমোলজি মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও ক্রম বিকাশ বুঝতে সাহায্য করার
পাশাপাশি পদার্থ ও শক্তির নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ও তৃতীয়
দশকে অবজারভেশনাল কসমোলজির বিকাশ শুরু হতে থাকে টেলিস্কোপের সাহায্যে মহাবিশ্ব পর্যবেক্ষণের
মাধ্যমে। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির দক্ষতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে টেলিস্কোপের ক্ষমতাও বৃদ্ধি
পেয়েছে। মানুষ মহাকাশ যান পাঠিয়ে মহাকাশে হতে প্রচুর উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। এই উপাত্তগুলোকে
তত্ত্বীয় কাঠামোয় বিশ্লেষ করার জন্য গড়ে উঠল ভৌত বা ফিজিক্যাল কসমোলজি (সূত্রঃ বিজ্ঞান
চিন্তা, পৃঃ ১৬)।
কসমোলজিক্যাল স্ট্যান্ডার্ড মডেল
►মহাবিশ্বকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে উপস্থাপন করার সর্বাধুনিক
মডেল হলো ল্যামডা কোল্ড ডার্ক ম্যাটার মডেল। মহাবিশ্বের তিনটি প্রধান উপাদান
হলো ১) গুপ্ত শক্তি ২) গুপ্ত বস্ত্ত এবং ৩) সাধারণ পদার্থ ও শক্তি (এ যাবৎ
আবিস্কৃত ফোটন, কোয়ার্ক-ইলেক্ট্রনসহ ১৭ টি মৌলিক কণা, প্রতিকণা ইত্যাদিসহ)। এই
মডেলের অপর নামক কসমোলজিক্যাল স্ট্যান্ডার্ড মডেল।
ব্যাক গ্রাউন্ড রেডিয়েশন
►মহাবিশ্ব প্রসারিত হলে আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য
বেড়ে যায়। আলোর তরঙ্গ শক্তি কমে যায়। ফলে অআলোর কোয়ান্টা ফোটন অদৃশ্য
মাইক্রোওয়েভে পরিণত হয় যা আধুনিক কসমোলজিক্যাল স্ট্যান্ডার্ড মডেলে Cosmic Microwave back ground
Radiation নামে পরিচিত। এই
রেডিয়েশনের কম্পিউটার সিমুলেশনের মাধ্যমে জানা যায় বিগ ব্যাংয়ের মাধ্যমে হাইয়েস্ট
এনার্জেটিক রেডিয়েশন হতে কী পরিমাণ শক্তি বা পদার্থ মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল।
তাছাড়া আরও জানা যায়, মহাবিশ্বের উৎপত্তি, ক্রমবিকাশ সম্পর্কে বুঝতে সাহায্য করার
পাশাপাশি পদার্থ ও শক্তির নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। (বিচি, পৃঃ ১৬)।
রহস্যময় মহাকর্ষের
সঠিক ব্যাখ্যা কী?
প্রকৃতিতে এত এত কণা। কিন্ত্ত
কণাগুলি কী দিয়ে তৈরি কেউ জানে না। বিজ্ঞানীরা শুধু জানে কীভাবে তৈরি-এতটুকুন
পর্যন্ত। তাই বিজ্ঞানীদের নিঃসংকোচ স্বীকারোক্তিঃ বিজ্ঞান না পারে অণু-পরমাণু
পরিমাণ কিছু সৃষ্টি করতে না পারে পুরোপুরি ধ্বংস করতে। এ প্রসঙ্গে আলবার্ট আইনস্টাইন বলেনঃ পদার্থ একেবারে চুপসে
যেতে পারে না। একসময় সূক্ষ্ণ বিন্দুতে গিয়ে থেমে যাবে পদার্থটি যাকে পদার্থ
বিজ্ঞানে পরম বিন্দু বা সিঙ্গুলারিটি বলা হয়।
ব্ল্যাকহোল
মহাকাশের কোনো বস্ত্ত যদি একটা
নির্দিষ্ট ক্রান্তীয় ব্যাসার্ধে সংকুচিত করে ফেলা সম্ভব হয় তাহলে স্থান-কাল এত বেশি
বেঁকে যাবে, যেটা আর নিছক উপত্যকার চেহারায় থাকে না। হয়ে যায় একটা গর্ত। যাকে বলা যা
মহাকাশের তলা বিহিন কুয়া। ক্রান্তিয় এই পরম সংকুচিত ব্যাসার্ধকে বলা হয় শোয়ার্জসিল্ড
ব্যাসার্ধ। ১০ লাখ ব্যাসার্ধের সূর্য শোয়ার্জসিল্ড ব্যাসার্ধে দাঁড়াবে মাত্র ৩ কিলোমিটারে।
পৃথিবীর আকৃতি হবে মাত্র ১ সেন্টিমিটারে। কার্ল শোয়ার্জসিল্ড আইনস্টাইনের সদ্য প্রকাশিত
সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব ব্যবহার করে ১৯১৫সালের ডিসেম্বর মাসে সর্বপ্রথম
ব্ল্যাকহোলের ধারণা দেন।
২০১৯ সালের ২৬ এপ্রিল বাংলাদেশ
সময় রাত ৯টা ২২ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের লাইগো ও ইতালির ভার্গো-২ মহাকর্ষ তরঙ্গের ডিটেক্টরে
একটি তরঙ্গ ধরা পড়েছে। এ তরঙ্গটি আগে শনাক্ত করা তরঙ্গ থেকে আলাদা। বিজ্ঞানীদের ধারণা,
একটি কৃষ্ঞ গহব্বর ও একটি নিউট্রন স্টারের সংঘর্ষ থেকে এ তরঙ সৃষ্টি হয়েছে, (বিচি মে,
২০১৯)।
►আমরা যা জানি, যা বুঝি কিংবা যা কল্পনা, চিন্তা-ভাবনা করি
তা তাত্ত্বিক। কিন্ত্ত বাস্তবে তা না-ও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ ব্ল্যাকহোল বিজ্ঞান
মনস্ক এমন ব্যক্তির নিকট এই শব্দটি অজানা থাকার কথা নয়। ব্ল্যাক হোল শব্দগুচ্ছটা বেশ
সরল মনে হয়। বাস্তবে মহাজাগতিক এ বস্ত্তটির প্রকৃতি সম্পর্কে কল্পনা করাও কঠিন না,
(বিচি, মার্চ, ২০১৯, বর্ষ ৬, সংখ্যা ২, পৃষ্ঠা ৩৯)।
স্ট্যান্ডার্ড মডেল
বর্তমানে প্রমাণিত স্ট্যান্ডার্ড
মডেল প্রকৃতির চারটি
মৌলিক বলের তিনটিকে যথা বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বল, সবল এবং দূর্বল নিউক্লিয় বল-কে একীভূত
করতে পারলেও মহাকর্ষ এখনো আলাদাই রয়ে গেছে। তাছাড়া বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বলের কণা ফোটন,
সবল নিউক্লিয় বলের কণা গ্লুয়ন এবং দূর্বল নিউক্লিয় বলের কণা w, w+, zo আবিস্কৃত হলেও বিজ্ঞানীদের ধারণাকৃত মহাকর্ষ বলের কণা গ্র্যাভিটন
এখন পর্যন্ত আবিস্কৃত হয়নি। মড়ার উপর খাড়ার ঘায়ের মতো যোগ হয়েছে ডার্ক এনার্জি ও
ডার্ক ম্যাটার। (বিচি জুন, ২০১৯, পৃষ্ঠা ৩৮)।
ভরশক্তি
বস্ত্তর প্রকৃত ভর জানা খুব সহজ
যদি তার শক্তির মান জানা যায়। অথবা যদি অআপনার জানা থাকে বস্ত্তর ভর তাহলে সেটার সঙ্গে
অআলোর বেগের বর্গগুণ করলে পাওয়া যাবে তার শক্তি। শক্তি অআর ভরের মধ্যে স্পষ্ট একটা
সম্বন্ধ দেখিয়ে দিলেন আইনস্টাইন (বিচি মার্চ, ২০২০, পৃঃ ২২)।
মহাকর্ষ
অনেক বড় পরিসরে মহাকর্ষ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অআবার বিপুল ভরের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ এই বল (বিচি..)
গ্রহ-নক্ষত্র ও ছায়াপথের চলাফেরাতে
বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বলের বড় কোনো ভূমিকা নেই (বিচি..)।
অআইনস্টাইন মনেএ করেন, সব ধরণের
শক্তি হলো মহাকর্ষের উৎস। কারণ, সব শক্তিরই একটা কার্যকর ভর রয়েছে (বিচি, জানুয়ারি
২০২১, পৃঃ ৬৩)।
মহাকর্ষ বাদে অন্য তিনটি বলের
মধ্যে এক ধরণের প্যাটার্ণ দেখা যায় (বিচি নভেম্বর, ২০২১, পৃঃ ৫১)।
দেখা যাচ্ছে, নানা দিক দিয়ে মহাকর্ষ
বেশ অস্বাভাবিক। তাহলে প্রশ্ন অআসে মহাকর্ষ এ রকম অআলাদা কেন? এর একমাত্র উত্তরঃ অআমরা
জানি না (বিচি নভেম্বর, ২০২১, পৃঃ ৫১)।
বিজ্ঞানীদের দাবী, এমন প্রশ্ন রয়েছে যার উত্তর এ বিশ্বে পাওয়া যাবে
না।
মহাবিশ্বের শুরু যেভাবে
কসমোলজিতে মহাবিশ্বের শুরু বিগ
ব্যাং থেকে। এই তত্ত্বমতে, বিগ ব্যাংয়ের শুরুতে মহাবিশ্ব ছিল প্রচন্ড উত্তপ্ত এবং ঘনত্ব
ছিল অত্যন্ত বেশি। চার লাখ বছর ধরে ঠান্ডা হতে হতে তাপমাত্রা তিন হাজার ডিগ্রি কেলভিনে
নেমে এল। তখন ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের সঙ্গে মিথস্ত্রিয়া করে তৈরি হলো পরমাণু। শুরুতে
হলো হাইড্রোজেন হিলিয়াম ইত্যাদি। পরে আরও ভারি পরমাণু। কোনো চার্জিত কণা অবশিষ্ট
রইল না। অচার্জিত কণা ফোটন রয়ে গেল আলাদা হয়ে। আলোর কণা ফোটন কোনো বাধা ছাড়াই
মহাবিশ্বের সব খানে ছুটে বেড়াতে লাগল। এই আলো সবখানে ছড়িয়ে পড়ল (বিজ্ঞানচিন্তা, অক্টোবর,
২০১৯, পৃষ্ঠা ১৭)।
ফোটন
ফোটন হলো এক গুচ্ছ ইলেক্ট্রো
ম্যাগনেটিক এনার্জি। আলো যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার সমন্বয়ে গঠিত, সে ক্ষুদ্রাংশটাই
ফোটন। ফোটনকে অনেক সময় ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক এনার্জির কোয়ান্টা হিসেবে বিবেচনা
করা হয়।
কোনো পদার্থের পরমাণুর ইলেক্ট্রো
ম্যাগনেটিক উচ্চতর কক্ষপথ থেকে তার স্বাভাবিক নিম্নতর কক্ষপথে নেমে এলে সে এক গুচ্ছ
শক্তির আকারে ফোটন বিচ্ছুরিত করে। ফোটন খালি চোখে আলোক রশ্মিরূপে দেখা যায়।
ইলেক্ট্রিক ফটো ইফেক্ট
আলো বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ বিশেষ।
বস্ত্তর ওপর আলোকপাতের ফলে বস্ত্ত থেকে ইলেকট্রন নির্গত হওয়ার ঘটনাকে বলা হয় বিদ্যুৎ
চুম্বকীয় বিকিরণ বা ইলেক্ট্রিক ফটো ইফেক্ট। (বিজ্ঞানচিন্তা, মার্চ, ২০২০, পৃষ্ঠা ১৪)।
কোয়ান্টাম
তত্ত্ব
►প্রতিটি প্রোটন একেকটি কোয়ান্টাম
কণা। প্রতিটির আছে তরঙ্গ ফাংশন। বৈদ্যুতিক চার্জ তাদের দূরে রাখলেও এরা তরঙ্গমালা প্রবাহিত
করে একে অপরের কাছে চলে আসবে-তার একটা অশূন্য সম্ভাবনা থাকে (বিচি পৃষ্ঠা ৫২)।
►কোয়ান্টাম টানেলিং না থাকলে তাই নক্ষত্ররা আলো দিতে পারতো না।
মহাবিশ্বের বেশির ভাগ অংশ হতো অন্ধকার, শীতল। আর
সে জন্যই গ্রহ-নক্ষত্ররা শুধু সার্বিক আপেক্ষিকতা দিয়ে চলছে, বিষয়টি ঠিক তা
নয়। বড়-ক্ষুদ্র সব জগতের কাজেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখছে কোয়ান্টাম তত্ত্ব।
(প্রাগুক্ত পৃঃ ৫২)।
উল্লেখ্য, নিউটনীয় বল বিদ্যা অনুসারে বস্ত্তর আদি বেগ ও বেগ বৃদ্ধির
হার জানা থাকলে আমরা বলতে পারব, নির্দিষ্ট সময়ের পরে বস্ত্তটি কোথায় থাকবে। কিন্ত্ত
কোয়ান্টাম বল বিদ্যায় নিশ্চিত করে বলা যায় না, বস্ত্ত কণাটি কত সময় পরে কোথায় চলে
যাবে।
Comments
Post a Comment