কতিপয় বৈজ্ঞানিক সমস্যা প্রসঙ্গে

 

কতিপয় বৈজ্ঞানিক সমস্যা প্রসঙ্গে

বিজ্ঞানীরা যা এখনও নিশ্চিত নন

হিগস বোসন কণা আবিস্কারের মধ্য দিয়ে হিগস ফিল্ডের অস্তিত্ব নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেকটা নিশ্চিত হতে পারলেও  এখনো কিন্তু অনেক প্রশ্নের উত্তর বাকি। কোনো কণিকা কেন হিগস ফিল্ডের সাথে শক্তিশালী মিথস্ক্রিয়া করবে, আবার কিছু কণিকা কেন খুব সামান্য মিথস্ক্রিয়া করবে, সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা তেমন কিছুই জানেন না। এমনকি ডার্ক ম্যাটার ও নিউট্রিনোর ভর হিগস ফিল্ড থেকে আসে কিনা, তা নিয়েও বিজ্ঞানীরা শতভাগ নিশ্চিত নন। এছাড়া কিছু জটিল সমস্যাও রয়েছে। ইলেকট্রন, কোয়ার্ক, ফোটন, গ্লুয়ন ইত্যাদি যেসব কণিকার সঙ্গে আমরা পরিচিতএ ধরনের প্রতিটি মৌলিক কণিকাকে স্ট্যান্ডার্ড মডেল একদম নিখুঁতভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে। স্ট্যান্ডার্ড মডেলের এই কাঠামো গড়ে উঠেছে প্রকৃতির কিছু প্রতিসাম্যতার উপর ভিত্তি করে। এসব প্রতিসাম্যতার উপর ভিত্তি করে পদার্থবিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম বলক্ষেত্রের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য গাণিতিকভাবে প্রতিপাদন করতে পারেন! কিন্তু আমরা যে হিগস ফিল্ডের কথা জানলাম, তা কোন প্রতিসাম্যতার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠেনি। অর্থাৎ হিগস ফিল্ড বলে একটি ফিল্ড আসলে কেন আছে তা সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। বিষয়টি কিছুটা এমন যেএটি আছে তাই আছে, কিন্তু কেন আছে তা আমরা জানি না। এটি পদার্থবিজ্ঞানীদের কাছে অনেক বড় একটি সমস্যা। স্ট্যান্ডার্ড মডেল আমাদের চেনাজানা দুনিয়াকে খুব নিখুঁতভাবে ব্যাখ্যা করতে পারলেও অনেকগুলো, ‘কেন?’ এর উত্তর দিতে পারে না। এই কেনগুলোর মধ্যে একটি বড় সমস্যা হলো হিগস ফিল্ডের মতো একটি ফিল্ডের উপস্থিতি। ফলে হিগস ফিল্ডের মাধ্যমে মৌলিক কণিকাদের ভর প্রাপ্তির বর্তমান ব্যাখ্যা আসলে একটি অসম্পুর্ণ ও অসন্তোষজনক সমাধান। বেশিরভাগ পদার্থবিজ্ঞানীই মনে করেন যেশুধু হিগস বোসনেই মহাবিশ্বতত্ত্বের গল্পের শেষ হতে পারে না।

মহাকর্ষ প্রসঙ্গে

“আমরা জানি, আমাদের চারপাশের জগতে এই বলটা কাজ করছে। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না এই বলটা অদ্ভুত। জাত-ধর্মেও অন্যদের চেয়ে আলাদা। অসামাজিক। কারণ, মহাবিশ্বের অন্যান্য মৌলিক বলের প্যাটার্নের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, সেগুলোর সঙ্গে মহাকর্ষের কোনো মিল নেই। প্রথমত, অন্যান্য বলের তুলনায় মহাকর্ষ খুবই দুর্বল। আবার এই বল কখনো বিকর্ষণ করে না, সব সময় আকর্ষণ করে”। শুধু কি তাই, কোয়ান্টাম জগতের সঙ্গেও এই বলকে খাপ খাওয়ানো যায় না।”।

“সবকিছুকে কোনো প্যাটার্নে খাপ খাওয়ানোর ইচ্ছা পদার্থবিদদের অনেক দিনের। এর একটি কারণ, তাঁরা পদার্থবিজ্ঞানের সবকিছুকে একত্র করে একটিমাত্র তত্ত্বের ভেতরে আনতে চান। অর্থাৎ একটিমাত্র তত্ত্ব দিয়ে মহাবিশ্বের সবকিছু ব্যাখ্যা করতে চান তাঁরা। একে বলা হয় থিওরি অব এভরিথিং বা সবকিছুর তত্ত্ব। এই চাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় বাধা মহাকর্ষ”।

“আবার অন্য মৌলিক বলগুলোর সঙ্গে মহাকর্ষের খাপ না খাওয়ার ব্যাপারটাও বেশ রহস্যময়। বিজ্ঞানীদের জন্য হতাশাজনকও বটে। কারণ, বিজ্ঞানীরা সবকিছুতে প্যাটার্ন খোঁজেন। অপরূপ মহাবিশ্বের বিচিত্রতা ও জটিলতা দেখলে অভিভূত না হয়ে আমাদের উপায় থাকে না”।

গ্র্যাভিটন খুঁজতে প্রয়োজন বৃহস্পতি গ্রহের সমান আয়তন বিশিষ্ট কণা ডিটেক্টর!

কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষের ঘটনা বেশ কয়েকবার ঘটতে দেখা গেছে। দুটি কৃষ্ণগহ্বর পরস্পরের কাছাকাছি চলে এলে, তারা একে অন্যকে শুষে নিতে বা গিলে ফেলার চেষ্টা করে। ঠিক এ ধরণের ঘটনাই মহাকাশে খুঁজে দেখেন বিজ্ঞানীরা। মহাকাশের বিভিন্ন জায়গায় দুটি কৃষ্ণগহ্বর পরস্পরকে কেন্দ্র করে সর্পিলভাবে ঘুরতে শুরু করে ক্রমেই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। একসময় দুটির মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ ঘটে। এতে সৃষ্টি হয় মহাকর্ষ তরঙ্গ। এই তরঙ্গের নামই কি গ্র্যাভিটন? প্রশ্ন বটে।

বিজ্ঞানীদের প্রত্যাশাঃ এ সংঘর্ষের দরুন চতুর্দিকে তীব্র বেগে গ্র্যাভিটন জাতীয় কণা বা তরঙ্গ বেরিয়ে আসতে পারে। আসলে সেটি ঘটে কি না, তা আমাদের পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে। কিন্তু ব্যাপারটা অত সহজ নয়। কৃষ্ণগহ্বর থেকে সত্যিই যদি কোনো গ্র্যাভিটন কণা বেরিয়ে আসে, তা–ও শনাক্ত করা খুব কঠিন। মহাকর্ষের দুর্বলতার কারণে আমার/আপনার ভেতর দিয়ে গ্র্যাভিটন কণা চলে গেলেও কিছুই টের পাবেন না। যেমন মহাবিশ্বে নিউট্রিনো নামের যে একটি অদ্ভুতুড়ে  কণা আছে তা কয়েক আলোকবর্ষজুড়ে পুরু সিসার পাত ভেদ করেও এই কণাটি চলে যেতে পারে। কারণ, এই কণা সহজে অন্য কারও সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে না। কিন্তু গ্র্যাভিটনের তুলনায় নিউট্রিনোকে সামাজিক কণা বলা যায়। কারণ, গণনায় দেখা গেছে, বৃহস্পতি গ্রহ আকৃতির কোনো ডিটেক্টর দিয়ে গ্র্যাভিটন কণা খোঁজা হলে তীব্র গ্র্যাভিটন উৎসের কাছেও প্রতি ১০ বছরে মাত্র একটি গ্র্যাভিটন কণা পাওয়া যেতে পারে অথচ মহাবিশ্ব ভাসছে নিউট্রিনো কণার উপর। 

গ্র্যাভিটনের খোঁজে এবার কৃষ্ণগহ্বরের ভেতরে প্রবেশের চিন্তা!

বিজ্ঞানীদের প্রস্তাবমতে, গ্র্যাভিটন কণা সরাসরি দেখতে কোনো ভৌত পরিস্থিতি অনুসন্ধান করা দেখা দরকার। আর  সেটি হতে পারে কৃষ্ণগহ্বরের ভেতরে অনুসন্ধান চালানো। অবশ্য সেটি খুব একটি বাস্তবসম্মত প্রস্তাব নয়। কারণ, আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বমতে, কৃষ্ণগহ্বরের কেন্দ্রে রয়েছে সিঙ্গুলারিটি বা পরম বিন্দু। এই বিন্দুতে পদার্থের ঘনত্ব এতই বেশি যে সেখানে মহাকর্ষ ক্ষেত্র অসীম। তাই কৃষ্ণগহ্বরের ভেতরে ঢোকার ব্যাপারটি আক্ষরিক অর্থেই ব্যাপারটা মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো। কারণ, এখানে স্থান-কাল ভীষণভাবে বিকৃত হয়ে যায়।। 

যদি জানা যেত কৃষ্ণগহ্বরের ভেতরে আসলে কী ঘটে, তাহলে কোয়ান্টাম মেকানিকস এবং মহাকর্ষকে একত্রে জোট বাঁধার জন্য কিছু ক্লু হয়তো পাওয়া যেত। দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি, সরেজমিনে কৃষ্ণগহ্বর পরিদর্শন করা কিংবা সেখানে গিয়ে সশরীর টিকে থাকা, পরীক্ষাটা সম্পন্ন করা, তারপর ফলাফলটা ঝুলিতে ভরে কৃষ্ণগহ্বরের অতি শক্তিশালী মহাকর্ষকে পাশ কাটিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসা এখন পর্যন্ত অসম্ভব।

কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষ থেকে যা জানা যায়                                                      

এতসবের পরও যদি গ্র্যাভিটন আবিষ্কার করা না যায় তাহলেও কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষ থেকে অনেক কিছুই জানা যায়। কারণ, মৃত্যুচুম্বনের জন্য পরস্পরের দিকে সর্পিল গতিতে ধেয়ে আসা কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষ থেকে জন্ম হয় মহাকর্ষ তরঙ্গের। গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ বা মহাকর্ষ তরঙ্গ হলো ত্বরণপ্রাপ্ত ভরের কারণে সৃষ্ট স্থানের ভেতর মৃদু ঢেউ। গোসলের সময় বাথটাবে বা কোনো শান্ত পুকুরের পানিতে হাত রাখলে, চারদিকে যেমন ছোট ছোট ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে, স্থানের ভেতর দিয়ে মহাকর্ষ তরঙ্গও অনেকটা সেভাবে ছড়িয়ে পড়ে। অতিভারী বস্তুগুলো স্থানের ভেতর চলাচল করলেও ঠিক একই ঘটনা ঘটে। এই চলমান ভর খোদ স্থানকেও বাঁকিয়ে দিতে পারে। তা এমন এক উত্তেজনা বা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে, যা তরঙ্গের মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

কৃষ্ণগহ্বর কি ভূতের কারখানা?

মজার ব্যাপার হলো কৃষ্ণগহ্বররের ভেতর মহাকর্ষ তরঙ্গ তার চলার পথে সামনে যা পায়, তাকেই সংকুচিত ও প্রসারিত করতে করতে এগিয়ে যায়। তাই মহাকর্ষ তরঙ্গের সামনে একটি বৃত্ত পরিণত হয় উপবৃত্তে, বর্গ পরিণত হয় আয়তক্ষেত্রে। ফলে মহাকর্ষ তরঙ্গ যদি আপনা/আমার দেহ ভেদ করে চলে যায়, তাহলে দেহের আকৃতি পুরোপুরি বিকৃত হয়ে যাবে। তা ঘুণাক্ষরেও বুঝা যাবে না। একেবারে ভুতুড়ে ব্যাপার! আসলে মহাকর্ষ তরঙ্গস্থানকে বিকৃত করে ১০-২০ গুণ। এর মানে হলো আপনার কাছে যদি ১০২০ মিলিমিটার লম্বা একটি লাঠি থাকে, আর তার ভেতর দিয়ে মহাকর্ষ তরঙ্গ চলে যায়, তাহলে লাঠিটা ছোট হবে মাত্র এক মিলিমিটার। এই সংকোচন এতই ছোট যে তা শনাক্ত করা বেশ কঠিন।

তবে বিজ্ঞানীরা মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্ত করার উপায়ও বের করেছেন। এমনই পরীক্ষা চালানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ অবজারভেটরি (লাইগো)তে।  সেখানে চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দুটি টানেল পরস্পরের সমকোণে স্থাপন করা হয়েছে। টানেলের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত দূরত্বের পরিবর্তন মাপার জন্য আছে একটি লেজার। মহাকর্ষ তরঙ্গ এর ভেতর দিয়ে চলে গেলে সেখানকার স্থান একদিকে প্রসারিত হয়, আবার অন্যদিকে সংকুচিত হয়। তার প্রভাব টানেলের লেজার রশ্মিতেও পড়ে।

মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্তে আর্থিক খরচ

যুক্তরাষ্ট্রের দুটি জায়গায় প্রায় ৬২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচে এ রকম দুটি টানেল স্থাপন করা হয়। ২০১৬ সালে সেখানে প্রথমবার মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্ত করেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় ১০০ বছর আগে এমন তরঙ্গের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন আইনস্টাইন। তবে এখান থেকে মহাকর্ষ কীভাবে কাজ করে, সে ব্যাপারে কোনো কোয়ান্টাম চিত্র পাওয়া যায় না। কারণ, মহাকর্ষ তরঙ্গ আর মহাকর্ষ কণা বা গ্র্যাভিটন এক জিনিস নয়। এটা অনেকটা আলোর অস্তিত্ব প্রমাণ করার মতো, আলো যে ফোটন দিয়ে তৈরি, তা প্রমাণ করা নয়। তবু একে অনেক বড় ধরনের আবিষ্কার বলতেই হবে।

অতিরিক্ত মাত্রার ধারণাঃ মহাকর্ষের দুর্বলতা ব্যাখ্যার জন্য মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো একটি আইডিয়া!

মহাকর্ষের দুর্বলতা ব্যাখ্যার জন্য মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো একটি আইডিয়া হলো অতিরিক্ত মাত্রার ধারণা। এ ধারণামতে, আমরা চার মাত্রা নয়, তার চেয়ে বেশি মাত্রার বিশ্বে বাস করি। কিছু পদার্থবিদ বলেন, মহাকর্ষ অন্য মাত্রাগুলোতে চলে যাওয়ার কারণে দুর্বল হয়ে গেছে।

মহাকর্ষ এখনো আমাদের কাছে বড় একটি রহস্য!

অতিরিক্ত মাত্রাগুলোকে আমলে নিলে মহাকর্ষ আসলে অন্য বলগুলোর মতোই শক্তিশালী। কিন্তু সেটিও ঠিক নয়, বেঠিক তা প্রমাণ করার উপায়ও এখনো আমাদের জানা নেই। তাই মহাকর্ষ এখনো আমাদের কাছে বড় একটি রহস্য।

বড় দৃষ্টিভঙ্গির দিকে আমাদের মন খোলা রাখতে হবে

তাহলে রহস্যময় মহাকর্ষের সঠিক ব্যাখ্যা কী? এই বলটা দুর্বল কেন? কেন সেটি অন্য বলগুলোর মতো নয়? এর কারণ এমনও হতে পারে, মহাকর্ষ হয়তো বিশেষ কোনো বল। মহাকর্ষকে অন্য বলের মতো হতে হবে কিংবা একটিমাত্র তত্ত্ব দিয়েই সবকিছু ব্যাখ্যা করতে হবে, এমনটা না–ও হতে পারে। বড় দৃষ্টিভঙ্গির দিকে আমাদের মন খোলা রাখতে হবে। কারণ, মহাবিশ্বের মৌলিক কিছু সত্য সম্পর্কে আমরা এখনো অন্ধকারে রয়ে গেছি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা এমন কিছু অনুমান করেছি, যা পরবর্তী সময়ে ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। কিংবা নির্দিষ্ট বা বিশেষ কিছু শর্ত সাপেক্ষে তা সত্য।

মনে রাখতে হবে, আমাদের লক্ষ্য হলো মহাবিশ্বকে সঠিকভাবে বুঝতে পারা

এমনও হতে পারে, আমাদের আগের জানা যেকোনো কিছুর চেয়ে মহাকর্ষ ভিন্ন কিছু, যার কথা আমরা আগে কখনো ভাবতে পারিনি। কিংবা কে জানে উল্টোটাও হয়তো সত্যি। মনে রাখতে হবে, আমাদের লক্ষ্য হলো মহাবিশ্বকে সঠিকভাবে বুঝতে পারা।

অনেক বেশি অনুমান করা বাদ দিতে হবে

তাই মহাকর্ষ ও গ্র্যাভিটন  আসলে কি, কেমন, সে সম্পর্কে অনেক বেশি অনুমান করা বাদ দিতে হবে। কারণ, নিউটন বলেছেন, সত্য দূরে নয়, অতি নিকটে।

কখনো যদি দেখা যায়, মহাকর্ষ বিশেষ কিছু এবং অন্যান্য মৌলিক বলের চেয়ে এটা একেবারেই আলাদা, সেটিই জোগান দিতে পারে মহাবিশ্বের বৃহৎ চিত্র সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ক্লু। এর মানে হয়তো মহাকর্ষ গভীর কিছু, যা মহাবিশ্বের নকশার মধ্যে গেঁথে আছে। মাঝেমধ্যে আমরা নিয়ম ছাড়াও ব্যতিক্রম থেকেও অনেক বেশি শিখতে পারি।

মহাকর্ষের এই রহস্য বোঝা সম্ভব হলে মহাবিশ্ব ও চারপাশের জগৎকে বোঝার ক্ষেত্রে অনেক বড় প্রভাব পড়বে। মনে রাখতে হবে, মহাকর্ষ বিশাল বিপুল দূরত্বে কাজ করতে পারে। এটিই একমাত্র ও প্রধানতম বল, যা মহাবিশ্বের আকৃতি এবং তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে।

মহাকর্ষঃ বিজ্ঞানীদের স্বপ্নিল নভোতরী!


মহাকর্ষ যে স্থান-কালকে বাঁকিয়ে দেয়, সেটিও কিছু চমৎকার সম্ভাবনার ইঙ্গিত করে। এই মুহূর্তে আমাদের পক্ষে এই সৌরজগতের বাইরে অন্য কোনো নক্ষত্র ব্যবস্থায় যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ, আমাদের নিকটবর্তী নক্ষত্রের দূরত্বও অনেক বেশি। কিন্তু মহাকর্ষের রহস্য ভেদ করা সম্ভব হলে হয়তো স্থানকে কীভাবে বাঁকাতে হয় কিংবা ওয়ার্মহোল কীভাবে তৈরি করতে হয় বা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, তা বুঝে ফেলতে পারব। সেটি সম্ভব হলে মহাবিশ্বের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়ানোর আমাদের এত দিনের যে অদম্য ইচ্ছা, তা একদিন সত্যি হতে পারে। তখন স্থান-কালের চাদর ভাঁজ করে মহাবিশ্বের যেকোনো প্রান্তে চলে যাওয়া যাবে চোখের পলকে। সেটি সত্যে পরিণত করার মূল চাবিকাঠি হলো মহাকর্ষ।

কাজেই রহস্যময় হলেও মহাকর্ষ বল শুধু আমাদের মাটিতে আটকে রাখে,  এই বলের কাঁধে চেপে হয়তো আমরা আকাশ-বাতাস, গ্রহ-তারকা ভেদ করে একদিন দূরে, বহুদূরে চলে যেতে পারব। আর সেই সম্ভাবনা নির্ভর করছে ভবিষ্যতের কোনো বিজ্ঞানীর হাতে মহাকর্ষের রহস্য সমাধানের ওপর। (সূত্রঃ ১. বিজ্ঞানচিন্তা ২. উই হ্যাভ নো আইডিয়া/ জর্জ চ্যাম ও ড্যানিয়েন হোয়াইটসন; ৩. গ্র্যাভিটি/মার্কাস চোন; ৪) উইকিপিডিয়া। 


কণাপদার্থবিজ্ঞানের স্ট্যান্ডার্ড মডেল

কোয়ান্টাম মেকানিকসে সবকিছুকে কণা হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এমনকি বলগুলোকেও কণা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয় এ তত্ত্বে। যেমন একটি ইলেকট্রন আরেকটি ইলেকট্রনকে ধাক্কা দেওয়ার কারণে দ্বিতীয় ইলেকট্রনটির যে চলাচল হয়, তার জন্য পদার্থবিদেরা মনে করেন, এই মিথস্ক্রিয়ার কারণ একটি ইলেকট্রন আরেকটি ইলেকট্রনের দিকে একটি কণা ছুড়ে দেয়, যার মাধ্যমে তার কিছু ভরবেগ স্থানান্তরিত হয়। ইলেকট্রনের ক্ষেত্রে বলবাহী এই কণাকে বলা হয় ফোটন। অন্যদিকে দুর্বল বলের বলবাহী কণার নাম ডব্লিউ ও জেড বোসন। এই বলবাহী কণা বিনিময়ের মাধ্যমে দুর্বল বল কাজ করে। আর শক্তিশালী বল বিনিময় হয় গ্লুয়ন কণার মাধ্যমে।

কোয়ান্টাম মেকানিকসের এই কাঠামোকে বলা হয় কণাপদার্থবিজ্ঞানের স্ট্যান্ডার্ড মডেল। এই মডেল প্রাকৃতিক জগতের অধিকাংশকে ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য রকম সফল। কোয়ান্টাম কণার দৃষ্টিভঙ্গিতে জগতের অনেক কিছু ব্যাখ্যা করা যায়। এমনকি আমরা আগে দেখিনি এমন অনেক কিছুর ভবিষ্যদ্বাণীও করা যায়। যেমন এই মডেল ব্যবহার করেই হিগস বোসন কণার ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল। লার্জ হ্যাড্রন কলাইডারে ২০১২ সালে কণাটি শনাক্ত করাও সম্ভব হয়েছে। আবার দুর্বল বল কেন ক্ষুদ্র পরিসরে কাজ করে, তার ব্যাখ্যাও পাওয়া যায় এ মডেল থেকে। আসলে এ বলবাহী কণার ভর অনেক বেশি। সে কারণে কণাটির চলাচল সীমাবদ্ধ। এত সফলতা সত্ত্বেও স্ট্যান্ডার্ড মডেলের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, একই উপায়ে মহাকর্ষকে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। 

কোয়ান্টাম মেকানিকসের মাধ্যমে মহাকর্ষকে ব্যাখ্যা না করতে পারার দুটো কারণ রয়েছে। প্রথমত স্ট্যান্ডার্ড মডেলে মহাকর্ষকে খাপ খাওয়াতে গেলে মহাকর্ষও কোনো কণার মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয় বলে কল্পনা করে নিতে হয়। পদার্থবিদেরা এই হাইপোথেটিক্যাল কণার একটি গালভরা নামও দিয়েছেন—‘গ্র্যাভিটন’। বাংলায় বলা যায় মহাকর্ষ কণা। এ কণার অস্তিত্ব যদি সত্যিই থাকে, তাহলে আপনি শুয়ে, বসে বা দাঁড়িয়ে যেখানেই থাকুন না কেন, আপনার দেহ থেকে অনবরত অতিক্ষুদ্র বলের মতো গ্র্যাভিটন কণা ছুটে যাচ্ছে ভূপৃষ্ঠের দিকে। আবার ভূপৃষ্ঠ থেকেও একই রকম কোয়ান্টাম কণা ছুটে আসছে আপনার দিকে। এই দুই মহাকর্ষ কণা বিনিময়ের কারণে আপনি পৃথিবীর বুকে আটকে থাকতে পারছেন। আবার পৃথিবী যে সূর্যের চারদিকে ঘুরে বেড়াতে পারছে, তার কারণও ওই গ্র্যাভিটন কণার অবিরাম স্রোত দুইয়ের মধ্যে বিনিময় হচ্ছে। এভাবে মহাকর্ষকে বেশ ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু এ ধারণার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো গ্র্যাভিটনের অস্তিত্ব পুরোটাই কাল্পনিক। বাস্তবে এ রকম কোনো কণার খোঁজ আজও পাওয়া যায়নি। অন্য বলগুলোর সঙ্গে মহাকর্ষের এই আপাত–অসংগতির অর্থ হতে পারে, আমরা যে প্যাটার্ন আবিষ্কার করেছি, সেটি সঠিক নয়, অথবা বড় কোনো কিছু আমরা এখনো বুঝতে পারছি না। কোনটা ঠিক? তা–ও অমীমাংসিত।

সমস্যা হলো সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব বেশ ভালোভাবে মহাকর্ষকে ব্যাখ্যা করতে পারে। তাই আমাদের ধারণা হয়েছে, এটাই সম্ভবত প্রকৃতির সঠিক ব্যাখ্যা। ঝামেলা হলো এ তত্ত্বটাকে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার মতো অন্য কোনো মৌলিক তত্ত্বের সঙ্গে একত্র করা সম্ভব হয়নি। অথচ কোয়ান্টাম মেকানিকসও প্রকৃতির সঠিক ও নির্ভুল ব্যাখ্যা করতে পারে বলে আমরা মনে করি।

সমস্যাটার কারণ কোয়ান্টাম মেকানিকস অনুযায়ী, মহাবিশ্বের চিত্র একটু আলাদা। এ তত্ত্বে স্থানকে সমতল পটভূমি হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু সাধারণ আপেক্ষিকতা অনুসারে, স্থান গতিশীল ও নমনীয়, যা সময়ের সঙ্গে মিলে স্থান-কাল গঠন করে। কাজেই বস্তুর ভর বা শক্তি স্থান-কালকে বাঁকিয়ে দিতে পারে। তাহলে প্রশ্ন আসে, কোন চিত্রটা সঠিক? মহাকর্ষ কি স্থানের বক্রতা নাকি কণার মধ্যে অজানা উড়ন্ত কোয়ান্টাম বল? মহাবিশ্বের সবকিছুই আসলে কোয়ান্টাম মেকানিকসের নিয়ম মেনে চলে। তাই মহাকর্ষও যদি সেই নিয়ম মেনে চলে, তাহলে বিষয়টা আমাদের জন্য বোধগম্য হয়ে উঠত। কিন্তু গ্র্যাভিটন বা মহাকর্ষ কণা এখন পর্যন্ত কাগজে–কলমেই সীমাবদ্ধ। গ্র্যাভিটন নামের কোনো কোয়ান্টাম কণার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মহাকর্ষ তত্ত্বঃ নিউটন থেকে আইনস্টাইন 

মহাকর্ষ বল আবিষ্কার হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন শ বছর আগে। স্যার আইজ্যাক নিউটন এর আবিষ্কারক। বলতে গেলে পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তিই দাঁড় করিয়ে দেয় এই সূত্র। নিউটন বলেছিলেন, মহাবিশ্বের প্রতিটা বস্তু পরস্পরকে আকর্ষণ করছে। সেই আকর্ষণ বলের মানও নিউটন হিসাব করে বলেন, দুটো বস্তুর ভর যত বেশি হবে তাদের মধ্যে মহাকর্ষীয় আকর্ষণ বল তত বেশি হবে। আবার বস্তু দুটোর মধ্যে দূরত্ব যত কম হবে, আকর্ষণ বলও তত বেশি হবে। আর দূরত্ব বাড়লে, আকর্ষণ তত কমবে। কিন্তু নিউটন বলতে পারলেন না, কেন বস্তু দুটোর মধ্যে মহাকর্ষ বল ক্রিয়া করবে?

আলবার্ট আইনস্টাইন বললেন ভিন্ন কথা। সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বে তিনি মহাকর্ষ বলের কারণ ব্যাখ্যা করেছিলেন। এ তত্ত্বমতে, গোটা মহাবিশ্ব আসলে স্থান-কালের একটা চাদর হিসেবে কল্পনা করে নেওয়া যায়। সেই চাদরের ওপর বসে আছে মহাজাগতিক বস্তুগুলো। এর ফলে স্থান-কালের চাদরে ত্রিমাত্রিক বক্রতা তৈরি হয়। সেই বক্রপথেই তুলনামূলক ছোট বস্তুগুলো বড় বস্তুর দিকে হেলে পড়ে। আর তাতেই মনে হয় বস্তুগুলো পরস্পরকে আকর্ষণ করছে।

CIRNN মনে করে অআইনস্টাইনের এই মহাকর্ষীয় তত্ত্ব বিবেচনা করা হলে মহাকর্ষ সম্পর্কে আর গবেষণার দরকার হয় না। মহাবিশ্বে মহাকর্ষের মহা কারণের জন্য মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইনের এই সরল ব্যাখ্যাই যথেষ্ট  ছিল।

পৃথিবীর নানা প্রান্তে বিভিন্ন গবেষণাগারে মহাকর্ষের প্রতিবল গ্র্যাভিটন কণা খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা!

কিন্তু বিজ্ঞানীরা আইনস্টাইনের এই সরল ব্যাখ্যায় পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। কারণ মহাকর্ষ বল ছাড়াও মহাবিশ্বে আরও তিন প্রকারের মৌলিক বল আছে। তড়িত্-চুম্বকীয় বল, দুর্বল নিউক্লিয় বল ও সবল নিউক্লিয় বল। এর মধ্যে দুটি চার্জিত বস্তুকণার মধ্যে যে বল কাজ করে, তা তড়িত্-চুম্বকীয় বল। পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভেতর মৌলিক কণিকাগুলোর মধ্যে যে স্বল্পপাল্লার বল কাজ করে তা দুর্বল নিউক্লিয় বল। আর দুটি নিউক্লিয়ন, অর্থাৎ প্রোটন ও নিউট্রনের মধ্যে যে শক্তিশালী বল কাজ করে, তা সবল নিউক্লিয় বল। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন প্রতিটি বলের পেছনেই একধরনের কণার কারসাজি আছে। যেমন তড়িত্-চুম্বকীয় বলের পেছনে কলকাঠি নাড়ে ফোটন কণা। দুর্বল নিউক্লিয় বল সৃষ্টির জন্য দায়ী ডব্লিউ বোসন ও জেড বোসন নামের দুটো কণা। আর সবল নিউক্লিয় বলকে বহন করে গ্লুওন কণা। বস্তুকণাগুলোকে পরস্পরের সঙ্গে ধরে রাখতে এগুলো আসলে অনেকটা আঠার মতো কাজ করে। তাই বিজ্ঞানীদের ধারণা, মহাকর্ষ বলের পেছনেও একধরনের কণা কলকাঠি নাড়ছে। সেই কণার নাম দেওয়া হয়েছে গ্র্যাভিটন। এ কণাটাই বস্তুর ভেতরে মহাকর্ষ বলের জন্ম দেয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত গ্র্যাভিটন কণার হদিস পাননি বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর নানা প্রান্তে বিভিন্ন গবেষণাগারে এখন গ্র্যাভিটন কণা খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা।  (সূত্রঃ https://www.bigganchinta.com/মহাকর্ষ-ও-গ্র্যাভিটন)

কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি (কোয়ান্টাম মহাকর্ষ)ঃ কোয়ান্টাম মেকানিকস-আপেক্ষিকতার মিলন তত্ত্ব?

কোয়ান্টাম মেকানিকস এবং আপেক্ষিকতার মিলনে নতুন যে তত্ত্ব পাওয়া যাবে, তার পোশাকি নাম কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি বা কোয়ান্টাম মহাকর্ষ। কিন্তু সমস্যা হলো সেটি কেমন হবে? কেউ জানে না। পদার্থবিজ্ঞানীরা মাঝেমধ্যে তাত্ত্বিকভাবে এ ধরনের কণার ভবিষ্যদ্বাণী করেন, পরে সেগুলো পরীক্ষামূলকভাবে পাওয়া যায়। সম্প্রতি লার্জ হ্যাড্রন কলাইডারে পাওয়া হিগস বোসন এমন একটি কণা। কিন্তু কোয়ান্টাম মেকানিকস আর আপেক্ষিকতাকে একীভূত করতে পদার্থবিদেরা এখন পর্যন্ত যতবার চেষ্টা করেছেন, ততবারই ব্যর্থ হয়েছেন। তবে আশার কথা হলো, এসব চেষ্টায় অসীমের মতো কিছু ফল পাওয়া গেছে।  তাঁদের এসব চেষ্টার ফসলের মধ্যে রয়েছে স্ট্রিং থিওরি এবং লুপ কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি। তবে এই তত্ত্ব দুটি সঠিক কি না, তা–ও আমরা জানি না। কারণ সেগুলো পরীক্ষা করে দেখাও কঠিন। তত্ত্ব দুটি পরীক্ষামূলকভাবে সত্যি প্রমাণ করতে আমাদের অবিশ্বাস্য রকম বড় পার্টিকেল অ্যাকসিলারেটর দরকার। একেকটা অ্যাকসিলারেটরের আকৃতি হবে আমাদের সৌরজগতের সমান। সেটি এই মুহূর্তে আমাদের পক্ষে বানানো অসম্ভব।

মহাকর্ষ বল তার সঙ্গীদের চেয়ে একেবারেই আলাদা। মহাবিশ্বের অন্যতম বড় রহস্য এটা। প্রশ্ন হচ্ছে, এই জটিল ধাঁধা সমাধানে আমরা কী করছি?

মহাবিশ্ব কীভাবে কাজ করে, তা বোঝার জন্য আমাদের করণীয় হলো পরীক্ষা করে দেখা। তারপর চৌকস কোনো আইডিয়া দিয়ে পর্যবেক্ষণকে ব্যাখ্যা করা। সে হিসেবে আমরা সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব এবং কোয়ান্টাম মেকানিকসের মধ্যে কোনটা সঠিক এবং কোনটা অকার্যকর, তা পরীক্ষা করে দেখতে পারি। যেমন আমরা যদি পরীক্ষা করে দেখতে পাই, দুটি বস্তু পরস্পরের মধ্যে গ্র্যাভিটন কণা বিনিময় করছে, তাহলে চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হবে যে মহাকর্ষ হলো কোয়ান্টাম পরিঘটনা।

সেটি সম্ভব হলে অবশ্যই অনেক বড় ঘটনা হতো। কিন্তু এই পরীক্ষা করা যে কতটা জটিল, সেটি একবার ভেবে দেখা যেতে পারে বৈকি। কারণ, মহাকর্ষ চারটির মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল বল। এমনকি ক্ষুদ্র একটি চুম্বকের বিদ্যুৎ–চৌম্বকীয় বলের ওপর আধিপত্য বিস্তার করার জন্য গোটা পৃথিবীর মহাকর্ষও যথেষ্ট নয়। ওই ক্ষুদ্র চুম্বকের বলের কাছেও পৃথিবীর মহাকর্ষ হেরে যায়। দুটি কণাকে একসঙ্গে রাখা হলে সেগুলোর মধ্যকার মহাকর্ষ বল প্রায় শূন্য হতে দেখা যায়। আর তখন সেখানে বিদ্যুৎ–চৌম্বকীয়, দুর্বল ও সবল পারমাণবিক বল অনেক বেশি শক্তিশালী।

গ্র্যাভিটন কণা দেখার জন্য আমাদের অনেক ভারী বস্তু দরকার। সেই বস্তুগুলোর হতে হবে মহাজাগতিক ভরের, যাতে অন্য বলগুলো ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় থাকবে। এই অতিভারী বস্তুকে পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষের মুখে ফেললেই গ্র্যাভিটন বা মহাকর্ষ কণা পর্যবেক্ষণ করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। সে জন্য হাতের কাছে যেকোনো বস্তু টনকে টন জড়ো করে, তা দিয়ে অতিভারী বস্তু তৈরি করে সংঘর্ষ ঘটালে হবে না। আমাদের দরকার দানবীয় অতিভরের কোনো কৃষ্ণগহ্বরের মতো বস্তু বা দুটি কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষ।

এ রকম মহাজাগতিক অতিভারী দুটি বস্তুর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটিয়েই কেবল মহাকর্ষকে হয়তো কোয়ান্টাম পরিঘটনা হিসেবে প্রমাণ করা সম্ভব। কিন্তু আমরা ভালো করেই জানি, এ রকম কিছু করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব। আমাদের বাজেট বলেন আর সামর্থ্য, কোনোটাতেই কুলাবে না। 


স্ট্রিং থিওরির স্ট্রিং-কে  দেখতে প্রয়োজন ১০-৩৩ সেন্টিমিটার ক্ষমতাসম্পন্ন ডিজিটাল মাইক্রোস্কোপের যা কল্পনাতীত। কারণ, বর্তমান ডিজিটাল যুগীয় মাইক্রোস্কোপের সক্ষমতা মাত্র ১০-১৭ সেন্টিমিটার। এটা দিয়ে বড়জোর ইলেক্ট্রন কিংবা কোয়ার্ক দেখা যেতে পারে। স্ট্রেন্জ কোয়ার্ক নয়।







Comments

Popular posts from this blog

যে জাতির রাজা-বাদশাহরা ছিলেন বিজ্ঞানী!

সেন্টার অব ইসলামিক রিসার্চ ফর নিউক্লিয়াস অ্যান্ড নিউরণ (CIRNN )

Update 8 Dec, 2023